Book review

আসমান


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬১

“সসীমকে ভালোবেসে করেছ পূজা
ভালবেসে হয়ে গেছ দাস
তোমার অনন্ত মন আর কারো নয়
এক অসীম প্রভূর নিবাস।”

ইমামের মুখে একটা রুবাইয়াত শুনে ওমার চেয়ারে স্থির হয়ে বসে আছে।

একজন ব্যর্থ প্রেমিকের জীবনের কঠিন ও অসহনীয় বাস্তব হতাশাগ্রস্থ জীবনের কথাই ফুটে উঠেছে, প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া বিখ্যাত গান “আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি” লিরিকের স্রষ্টা লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা নতুন উপন্যাস “আসমান” এ।

‘তুই আমাকে বুঝতে পারিসনি।’
‘হ্যাঁ পারিনি, কারন আমর কাছে মনে হয়েছে ড্রাগ ছাড়া তোকে বোঝা সম্ভব না। আর সেটাও ট্রাই করেছি, কিন্তু কেন যেন ড্রাগ আমাকে পুরা মজা দিতে পারেনি।’
‘তোর আরও ট্রাই করা উচিত ছিল।’
‘তা হলে তো ড্রাগ আমাকে খেয়ে ফেলত, আমি ড্রাগের দাস হয়ে যেতাম।’

এভাবেই এগিয়েছে বাস্তবতার নিরিখে গল্পটি। এই উপন্যাসে জীবনের গল্পের সাথে সাথে জীবন দর্শন, বিজ্ঞান, বিভিন্ন মতবাদ আলোচনা হয়েছে।

আছে মানবীয় প্রেম, খোদায়ী প্রেম, দন্দ, সংঘাত, সম্মুখ যুদ্ধ সবই এক মলাটে।

জাতীয়াতাবাদের ভয়ংকর রুপটাও আলোচিত হয়েছে সমাজতন্ত্রের একপেশে নীতির পাশাপাশি।
‘গত দুশো বছর যতগুলো লড়াই হয়েছে তার বেশিরভাগই হয়েছে জাতিয়াতাবাদী লড়াই। এক জাতি আরেক জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে লুট করেছে তাদের সম্পদ, জমি, হত্যা ও নির‌্যাতন করেছ; পদানত করে শাসন করেছে। ইউরোপিয়ান জাতিগুলো নেকড়ের মতই দলবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাদবাকি বিশ্বকে লুণ্ঠন করেছে।’

লেখক মুসলমাদের পরাজয়ের কথা এভাবে তুলে ধরেন-
‘মুসলমানদের মেরুদন্ড সেদিন থেকেই ভাঙা শুরু হয়েছে যখন তারা দ্বীনি বন্ধন বা উম্মাহ্ থেকে ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদী পরিচয়ে পরিচিত হতে শুরু করেছিল।’
তুলে ধরেছেন ইসলামে নারী শিক্ষার গুরুত্বকে।

আফগানিস্তানের যুদ্ধের কথা বলেতে গিয়ে লেখেন তাদের প্রচলিত একটি কথা-
‘আমরা একটা কথা বলে থাকি, আল্লাহ যখন কোন পরক্রমশালী জাতিকে ধ্বংস করতে চান তখন তার মাথায় আফগানিস্তান আক্রমনের চিন্তা ঢুকিয়ে দেন।’

লেখক যুদ্ধের কথার সাথে আফগানিস্তানের সুন্দর একটা বর্ননা দিয়েছেন এই বইতে।

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে জালাল উদ্দীন রুমির অনেক কবিতা তুলে ধরেছেন যেমন-
“মুখের কথাই সকল কষ্টের কারণ,
তাই কারো কথায় বেশি গুরুত্ব দিও না।
ভালোবাসার সাম্রাজ্যে কথার কোন স্থান নেই
ভালোবাসা হলো নীরবতা।
তুমি কেবল তোমার হৃদয় দিয়েই
অনন্তকে ছুঁতে পার।”

এই উপন্যাসে একজন মেধাবী যুবকের ব্যার্থ জীবন, মাদকে ভয়ংকর ছোবল ও তার থেকে উত্তরণসহ জীবন ঘনিষ্ট নানা বিষয় উঠে এসেছে।

দুঃখকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে-
“ দুঃখ-কষ্টের ভার কেউ কারোটা বহন করতে পারে না। সেটা কাঁধে নিয়েই মানুষকে নির্দিষ্ট পথ আর সময় অতিক্রম করতে হয়। সাহসী আর বুদ্ধিমানেরা ধৈর্যের সাথে এই পথ আর সময়টুকু অতিক্রম করে। বোকার চায় তার সেই ভার অন্য কারো কাঁধে কিছুটা তুলে দিতে। তোরা যেটাকে বলিস শেয়ার করা।

মানুষের ভেতরের কষ্টটা অপার্থিব, আত্নিক, আধ্যাত্নিক। আত্নিক শক্তি সম্পন্ন কোন মানুষ যদি তোর সেই কষ্টের সময়টুকুতে তোর বন্ধু বা চলার সাথি হয় তা হলে দেখবি তোর কষ্টের সময় আর পথ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। এর বাইরে দুর্বল অন্তরের বন্ধুরা তোর মনের আগুনে বাড়তি কিছু খড়কুটো তুলে দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারে না। এছাড়া আদতে কষ্টের কোন শেয়ার নেই।”

লেখক একটা সুন্দর মেসেজ দিতে চেয়েছেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে। আমি মনে করি লেখক এক্ষেত্রে সফল।

এই বইটা পড়ে মনে হয়েছে অনেক দিন পর চমৎকার একটা উপন্যাস পড়লাম। যা কিনা আমায় মন্ত্রমুগ্ধের ন্যয় আটকে রেখেছিল।

“আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামো বে থেকে বিনা বিচারে ১২ বছর জেল খেটে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশী ওমার এখন কোথায় যাবে?
বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা দায়িত্ব নেবে না সন্ত্রাসী ওমারের!
ওমার এখন কোথায় যাবে?
এই প্রশ্নসহ অনেক কিছু জানতে হলে পড়তে হবে ‘আসমান’।”

Nazmul Haque

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬২

মলাটের উপর বইয়ের নাম আর লেখকের নামের নিচে লেখা ‘যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়’, দেখে পাঠকমন চমকে ওঠে। কী এমন গল্প এটি? লতিফুল ইসলাম শিবলীর উপন্যাস ‘আসমান’, না পড়লে অনুধাবন করা যাবে না- এ আসমান আকাশের চেয়েও বড়।

‘বৃক্ষদের ভেতর বটবৃক্ষ সবচেয়ে দুঃখী বৃক্ষ। এই বৃক্ষের জীবন মানুষের মতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ডালপালার ভেতর থেকে নেমে আসে ঝুরি, ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে আর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এর প্রথম মূলটি।’ এভাবে ভাবতে পারা নেহাৎ সহজ কাজ নয় কিন্তু! অথচ লেখক শিবলী ঠিকই ভেবেছেন। ‘আসমান’ উপন্যাসটি শুরু থেকে শেষ অবধি থ্রিলিং। জীবন, জীবনবোধ, প্রেম, ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ কিংবা নিবিড় সত্য দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আমেরিকার কুখ্যাত কারাগার গুয়ান্তানামো বে থেকে বিনা বিচারে বারো বছর কারাবরণ শেষে মুক্তি এক বাংলাদেশি তরুণের রুদ্ধশ্বাস জীবনকাহিনি নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘আসমান’।

পাঠশেষে মনে হবে- যেনতেন ধর্মবয়ানের চেয়ে এ বইটি একজন মানুষকে সহজ উপায়ে ধর্মপরায়ণ করে দিতে পারে, প্রেমিক বানাতে পারে, খাঁটি সোনার জীবন্ত পুতুল বানাতে পারে। ভাষা, শব্দচয়ন, বর্ণনাভঙ্গি এতো জীবন্ত যে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়- এ এক উপন্যাস। তবে হ্যাঁ, বইটি লেখা হয়েছে সত্য ঘটনার ছায়া অনুসরণে।

পাঠান্তে পাঠকহৃদয়ে তলানির মতো থেকে যাওয়া কিছু বাক্য উদ্ধৃত করা এখানে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক :

ক. ‘শিল্পীর জীবনও কখনো কখনো শিল্প হয়ে ওঠে।’

খ. ‘দুঃখ-কষ্টের ভার কেউ কারোটা বহন করতে পারে না। সেটা কাঁধে নিয়েই মানুষকে নির্দিষ্ট পথ আর সময়টুকু অতিক্রম করতে হয়। সাহসী আর বুদ্ধিমানেরা ধৈর্যর সাথে এই পথ আর সময়টুকু অতিক্রম করে। বোকারা চায় সেই ভার অন্য কারো কাঁধে কিছুটা তুলে দিতে। তোরা যেটাকে বলিস শেয়ার করা।’

গ. ‘প্রেমে পড়লে মানুষ পাখি হয়ে যায়।’

ঘ. ‘…বয়সে আমরা যেমনিই হই না কেন আমাদের কাছ থেকে প্রিয় জিনিস কেড়ে নিলে একই রকম দুঃখ লাগে। এই হঠাৎ আসা দুঃখ-কষ্ট আমাদের শিক্ষা দেয় সুখের জীবন কত অনিশ্চিত কত ভঙ্গুর।… … মানুষ কষ্ট পেতে পেতে পরিণত হয়। জীবনের শুরুতেই তুমি যে কষ্টটা পেয়েছ এটাকে যদি তুমি শিক্ষা হিসেবে নাও তবে তোমার বাকি জীবন কোনো কষ্টই তোমাকে এমন অস্থির আর ভেঙে ফেলতে পারবে না।… … বিশ্বজগৎ একটা পাঠশালা। এখানে প্রতিটি ঘটনার ভেতরেই একজন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষক মানে কোনো ব্যক্তি বা অদৃশ্য কিছু নয়। সেই ঘটনাটা নিজেই একজন শিক্ষক।… … যা পেয়েছ তার জন্য এত উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছ তার জন্য এত বিষাদেরও কিছু নেই।…’

ঙ. ‘যখন বস্তুর লোভ মানুষকে খেয়ে ফেলে তখন সেই মানুষের জীবন হয় পশুর মতো। যেমন খাবারের লোভ দিয়েই বিশাল প্রাণী হাতি আর হিংস্র প্রাণী বাঘ, ভল্লুক ও অন্যান্য প্রাণীকে পোষ মানানো যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ভোগ যখন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে তখন সেও তেমন পশুতে পরিণত হয়। মানুষ তখনই শ্রেষ্ঠ যখন সে ভোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে…।’

গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী কয়েক বছর ধরে তার গদ্যশৈলীর নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলেছেন ধারাবাহিকভাবে। ‘দারবিশ’ কিংবা ‘দখল’ এর মতো ‘আসমান’ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। সুখপাঠ্য এ উপন্যাসটির জন্যে লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী অবশ্যই হৃদয়জ ভালোবাসার দাবিদার।

আহমেদ তানভীর

Article link


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৩

এবারের মেলায় প্রথম কেনা বই ছিল ‘আসমান’
বইটা আমি এমন সময়েই পড়ি যখন একটা বিষয় নিয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।
তপ্ত মরুভূমির বুকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আপনাকে যে প্রশান্তি দিবে, বইটা আমাকে ঠিক তেমনি হতাশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে উত্তরণের অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত বইটি শিবলী ভাইয়ার অন্যতম সেরা কাজ বলে আমার বিশ্বাস😊

এবার আসি কাহিনী প্রসঙ্গে,

গল্পের প্রধান চরিত্রে আছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওমার।মা এবং ভাইদের নিয়ে তার পরিবার।নীড়হারা পাখির মত দিশেহারা অবস্থায় যখন সে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছিল,তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসেন একজন ইমাম সাহেব।

ঘটনাচক্রে একসময় সে জড়িয়ে পড়ে এক জিহাদি কর্মযজ্ঞে।
যার জন্য সে পাকিস্তান পেরিয়ে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান এর মত জায়গায়!
দেশের জীবনের সাথে সেখানকার সবকিছুর আকাশ পাতাল তফাৎ।
আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে এমন এক জীবনের পথে ওমার পা বাড়ায়, যেখানে মৃত্যু অবধারিত।বেঁচে থাকাটাই যেন আশ্চর্য ঘটনা।
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসে সে সন্ধান পায় আসমান এর।জাদুর কাঠির স্পর্শে যেমন মৃত মানুষ জীবিত হয়ে ওঠে,আসমানের সংস্পর্শে তেমনি সে ফিরে পায় নতুন জীবন।অতীতের ওমার ও বর্তমান ওমারের মাঝে এখন বিস্তর ফারাক।
নানা ঘটনার আবর্তনে কাহিনী এগিয়ে যায়।
‘আসমান’ কখনো আপনাকে হাসাবে, কখনো কাঁদাবে আবার কখনো ভাবতে বাধ্য করবে নিজেকে নিয়ে।
পৃথিবীতে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি?সৃষ্টিকর্তা কেন সৃষ্টি করলেন।আমরা তাঁর অর্পিত দায়িত্ব কতটাই বা পালন করি।যেসব বিষয়ে আমরা মন খারাপ করি,হতাশ হই সেগুলো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কিনা!

এই উপন্যাসে মুগ্ধ হওয়ায় মত মত বেশ কিছু চরিত্র ছিল।
তবে আমি ওমারের প্রেমে পড়েছি

চরম বিপদেও কিভাবে স্থির থাকতে হয়,ধৈর্য রাখতে হয়,আল্লাহর ওপর অটুট বিশ্বাস থাকলে সকল বাঁধাই যে অতিক্রম করা যায়!
ওমার আমাদেরকে তা শেখায়।
বাস্তব জীবনে এমন কাউকে পেলে মন্দ হতো না😍

যাইহোক, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বন্ধুদের এই বইটা উপহার দিব।কেননা এমন সুন্দর একটা বই না পড়লে একটা অপূর্ণতা রয়ে যাবে!

শিবলী ভাইয়া,
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন আপনার লেখা সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটা?
আমি একবাক্যে বলব এই বইয়ের কথা।
যদিও আপনাকে চিনেছি ‘দারবিশ’ বইয়ের মাধ্যমে💙
‘দখল’ ও অসাধারণ ছিল👌👌
কিন্তু এই বইটা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
যেই মুহূর্তে আমার খুব দরকার ছিল ঠিক সেই মুহূর্তেই বইটা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে💜

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।সামনের দিনগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো

ফেরদৌসী আহমেদ

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৪

রাত ৩.৩৫
চারিপাশে নিঃশব্দ রাতের বিচিত্র কোলাহল। আমি এই রহস্যময় কোলাহলে সব অনুভূতির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে আছি এক অভূতপূর্ব আবেগের মুখোমুখি হয়ে।

অনেক অপেক্ষার পর হাতে পেয়েছি আসমান।লতিফুল ইসলাম শিবলীর আসমান।মুলত আমি আমার প্রাপ্তিটুকু প্রকাশ করার দরিদ্র চেস্টা করছি।রিভিউ হয় বইয়ের। কিন্তু আসমান কোন বই তো নয়।এ এক জীবন্ত উপখ্যান।আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি রাত ১২.৩৫ আসমান যখন শেষ হয়েছে অনেকদিন পর আমি আমার প্রভুর সান্নিধ্য পেয়েছি।বুক উজার করে অশ্রুর নজরানায় আমি রবকে ডেকেছি।হৃদয় আল্লাহর ঘর!এটা আমি এতটা জীবন্তভাবে উপলব্ধি করতে পারতাম না যদি না আসমান ছুয়ে দেখা হতো।আমি কতো কতোদিন চেয়েছি একজন শায়খের সাথে মনের দন্ধ নিয়ে আলাপ করতে।হায় আসমান আমায় কতো কতো প্রশ্নের সমাধান করে দিল।

আমারি মতো দিশেহারা এক পথিক ওমার।প্রাপ্তির খাতায় প্রভুর দয়াটুকুই যার পুজি।জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়ে এসে একজন প্রবীণ ঈমামের হৃদয়ের আলোয় ওমার সত্যের চির স্বাদ গ্রহন করে।ধীরে ধীরে পথহারা পথিক পায় খোদার নূরের ঝলক।বদলে যায় জীবন।তাবলীগ জামাতের সাথে পাকিস্থান গিয়ে দেখা হয় আফগান যুবক খালিদের সাথে।নিজের জীবনের বিনিময়ে কিনে নিবে জান্নাত,এই ব্যবসায় আল্লাহর সাথে লেনদেন করতে চলে আসে আফগানিস্তান। তারপর!
তারপর!
তারপর!
অক্ষরে অক্ষরে কান্না,প্রেম, খোদার কাছে নতজানু হওয়ার স্বাদ।প্রেমিকা আসমার সাথে বিচ্ছেদ!
তারপরের অধ্যায়ের কোন অভিব্যক্তি নেই।আমার চোখের কান্নায় বাকিটা মিশানো।গুয়েতনামার সেই কুক্ষ্যাত কারাগারে কতটা কাছাকাছি হয় আমার রব তার ফেরারি বন্ধি মাশুকের,তা আসমান পড়লে জানবে নালায়েক কমজোর বান্দারা।

এক বাংলাদেশি যুবকের ঘরে না ফেরার গল্পো।এক পাখি কতো অপেক্ষার পর ফিরে পায় আসমান তার গল্পো।এক দিকহারা পথিক ফিরে পায় পথের দিশা তার গল্পো।লেখক তার সবটুকু দিয়ে কি মমতায় যে অনেকগুলো না পাওয়াকে এক করেছেন।তা সত্যিইই বিশ্ময়!এরপর আর বলার আমার ক্ষমতা নেই।ওই লেখক সার্থক যার লেখা পড়ে পাঠকের হৃদয় তোলপাড় করে।আর শুধু তোলপাড় না,যার লেখা পড়ে পাঠক বিলিন হয়ে যায় ভাবনার অতলে বলতে হবে তাহলে সেই লেখক তার সৃষ্টিতে চির স্বার্থক।আমি আসলে যতটা বুজাতে চেয়েছি তার কিঞ্চিৎ ও পারিনি।আমি অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে সব সময় খুব দরিদ্র।আর এই আসমান পড়ে আমি কতটা দরিদ্র হয়ে গেছি তা বুজাতে পারবো না!আমি শুধু জানি আসমান আমায় বদলে দিয়েছে।যে বদলটা আমি অনেক দিন থেকে চাইছিলাম।

যে বাক্যগুলো আমাকে রবের কাছে নতজানু করেছেঃ
১.হৃদয় আল্লাহর ঘর!এই ঘরে বসবাস অসীমের।সেখানে সসীম কে বসালেই যত বিপত্তি।
২.আমি এসেছি আল্লাহর ইচ্ছায়,যাবোও তার ইচ্ছায়।মাঝখানের সময়টুকুতে কেনো তবে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করবো।আমার যা প্রয়োজন যিনি আমার থেকে বেশি জানেন তিনিই আমায় তা দিবেন।
৩.প্রতিটা অক্ষর জোড়া দিয়ে দিয়ে যে বাক্য সাজিয়েছেন লেখন তার কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবো।আমি শুধু দোয়া করছি এবং কামনা করছি এই কলমগুলোই একদিন রচনা করবে আমাদের চির স্বাধিনতার গল্পো।তাদের হাত ধরেই আসুক মুক্তির মিছিল!সবশেষে লেখকের নেক হায়াত কামনা করছি।এই অশান্ত পৃথিবীতে আপনার কলমের খুব দরকার।নয়তো দিকহারা পাঠক কি করে ডুব দিবে তৃপ্তির সমুদ্রে!

Marjana Saleh

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৫

“আসমান”
.
যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়।
.
কী এমন গল্প এটি? লতিফুল ইসলাম শিবলীর উপন্যাস “আসমান” না পড়লে কখনো অনুধাবন করা যাবে না।
.
লেখকের নামটা জীবনে প্রথম দৃষ্টিগোচর হয় শক্তি নামের
একটা ব্যান্ড মিক্স এ্যালবামের প্রচ্ছদ থেকে,কেন জানিনা!
সেই থেকে শুরু লেখক সম্পর্কে জানার আগ্রহ।ধিরে ধিরে
যা জানলাম, সেটা একটা ইতিহাস!বিস্তারিত লিখতে গেলে
আরেকটা বই লিখতে হবে।
.
টুকটাক গান শোনতাম, সেই সুবাদে LRB ব্যান্ডের একটা
গান শুনি “জংধরা শিকলের শব্দে” নামের শিরোনামে।
পরে সেটা সোলস্ ব্যান্ডও গেয়েছিল।তখনো জানতাম না
যে গানটার লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী!
.
গানটা শোনার পরে গানের প্রতিটি শব্দ আমাকে এমন
আকৃষ্ট করে, এমন একটা মোহ তৈরি করে যে আমাকে
অবাক করে দেয়!গানের কথাগুলো বুঝিয়ে দিল জীবনকে
শব্দেও প্রকাশ করা যায়।কারারুদ্ধ একটা জীবনের বাস্তব
চিত্র ফুটে উঠেছিল সেই গানটার মাঝে!যেন নিজের চোখে
দেখতে পাচ্ছিলাম একজন মানুষের কারারুদ্ধ জীবন।
.
এবারের বই মেলায় কেনা একমাত্র বই ছিল “আসমান”।
বইটি আমি এমন একটা সময়ে কিনি, যখন জীবনের
প্রতিটি মুহূর্ত পার করছিলাম জীবনে ঘটে যাওয়া এক
মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হয়ে যখন করুন সময় পার
করছিলাম!বইটি পড়ার পরের অনুভূতিটা প্রকাশের শব্দ
আমার জানা নেই!বইটি পড়ার পরে যা উপলব্ধি করেছি
তা আমি নিতে পারছিলাম না!!
.
বইটি যতক্ষন পরেছিলাম, লেখাগুলো আমাকে নির্দিষ্ট
একটা যজ্ঞের মধ্যে বন্ধি করে রেখেছিল! বলে যা বোঝাতে পারবনা।বইটি পড়ে নতুন একটা অনুপ্রেরন পেয়েছি, যা দিয়া হতাশাকে ঘুটিয়ে ফেলা যায়।
.
দুঃখ-কষ্টের ভার কেউ কারোটা বহন করতে পারে না।সেটা
কাঁধে নিয়েই মানুষকে নির্দিষ্ট পথ আর সময়টুকু অতিক্রম
করতে হয়। সাহসী আর বুদ্ধিমানেরা ধৈর্যর সাথে এই পথ
আর সময়টুকু অতিক্রম করে।জীবন, জীবনবোধ, প্রেম,
ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ কিংবা নিবিড় সত্য দারুণভাবে ফুটিয়ে
তোলা হয়েছে বইটিতে।
.
বইটির ভাষা, শব্দচয়ন গুলো, বর্ণনাভঙ্গি এতো জীবন্ত যে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়- এ এক উপন্যাস।শব্দগুলো এত
সচ্ছ, সতেজ-তাজা যে, পড় শুরু করলে নিজের অজান্তেই
ভুলে যাবেন যে এটা একটা উপন্যাস!এক কথায় বলতে
হয় অসাধারন, অনন্য, ‌অনবদ্য!
.
বইটি সেই কবেই কয়েকবার পড়ে ফেলেছি, রিভিউ লিখব
সাহস পাচ্ছিলাম না।কি লিখব এই বই নিয়ে, এই বইটি
নিয়ে রিভিউ লিখার ক্ষমতা কি আমার আছে?অর্ধেকটা
রিভিউ সেই কবেই লিখে রেখেছিলাম, আজকে অজানা
এক সাহস কোথা থেকে জানি আসল, তাই লিখে ফেলছি।
.
লেখা লেখকদের কাজ।আমি নগন্য, লিখতে পারিনা!এইটুকু লিখতে গিয়েই আমার অবস্থা যা তা!
.
পরিশেষে:-প্রিয় কবি কে আল্লাহ নেক হায়াত দান করুক,
যাতে করে প্রিয় কবি আরো এই রকম অনেক অনেক অমর
সৃষ্টি আমাদের হাতে তুলে দিতে পারেন, ছুম্মা আমিন 💕

Fokroul Hasan

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৬

যত সময় ধরে এই “আসমানে ” ডুবে ছিলাম।
মনে হয়েছিল আমি যেন নিজেকে আল্লাহ কাছে ধীরে ধীরে ধরা দিয়েছিলাম।
একটা বই মানুষকে বদলাতে পারে পুরোপুরি ভাবে।আসমান তার প্রমাণ। যে বই পারে তার প্রতিপালকের কাছে ঐ বান্দাকে আরো কাছে আনতে। আপনি যখনই যেখানে থাকুন না কেন আপনার আমার প্রতিপালক উপর চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখুন, তিনিই পথ দেখাবেন।
আসমান পড়ার পর আমি যেন নিজকে হারিয়েছি। অন্তরকে করেছি আরো শক্ত। মনোবল আরো বেড়েছে।
আসমান’ উপন্যাসটি শুরু থেকে শেষ অবধি থ্রিলিং। জীবন, জীবনবোধ, প্রেম, ধর্ম, অধ্যাত্মবাদ কিংবা নিবিড় সত্য দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আমেরিকার কুখ্যাত কারাগার গুয়ান্তানামো বে থেকে বিনা বিচারে বারো বছর কারাবরণ শেষে মুক্তি এক বাংলাদেশি তরুণের রুদ্ধশ্বাস জীবনকাহিনি নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘আসমান’।

Taraq Rahman

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৭

”আমি কাঁপতে কাঁপতে বইটি পড়েছি। শুধু শুনেছি আর টিভিতে কিছু ফুটেজ দেখেছি আফগান শিশু নারীদের উপরে। এই প্রথম আমি কোনো লেখকের এমন দুঃসাহসী লেখা পড়লাম।

আমি বই পাগল মানুষ “আসমান” বইটি আমার জীবনের পড়া হাজার বইয়ের ধারণা পাল্টে দিয়েছে।”

কি ভীষণ ভালবাসায় ভরা এ সব রিভিউ… আমাকে আলোড়িত করে।

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৮

#আসমান নিয়ে রিভিউ লেখার সামর্থ্য আমার নেই, একজন ক্ষুদ্র পাঠক হিসেকে শুধু বলতে পারি আসমান এমন একটি বই যেখানে একজন পাঠক সবকিছু খুঁজে পায়। বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা, কল্পনা,বাস্তবতা, থ্রীলার, রোমান্টিকতা, টান টান উত্তেজনা, জীবনের চরম সংকটে টিকে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার উপায় সবকিছুর মিশ্রণে লেখা আসমান। #লতিফুল_ইসলাম_শিবলী ভাই হলো সেই লেখক যিনি নিজেই পুরো একটা বই।যার লেখায় উঠে এসেছে সত্য সুন্দর পৃথিবীর চিত্র।

আধ্যাত্মিকতা আর বাস্তবতার চমৎকার মিশেল হয়েছে আসমানে।স্বদেশ থেকে বিদেশের পটভূমি এসেছে এতো গোছানোভাবে। গল্পটি বাংলাদেশি এক যুবকের। মনের অশান্তি আর অস্থিরতার ফলে সে খুঁজে ফিরছিল কোথায় পাওয়া যায় একপশলা প্রশান্তির বৃষ্টি।যেখানে গিয়ে ভুলে থাকা যাবে সকল অশান্তি,অপ্রাপ্তির দুঃখ। তাই বন্ধু রুশোর সাথে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তার মা বলেছিল মসজিদের ইমামকে গিয়ে বলতে, আপনি আমাকে বন্ধু বানিয়ে নিন। ইমামের কথায় ওমার রিজওয়ান খুঁজে পায় জীবনের আসল অর্থ। এরপর ঘুরে যায় তার জীবনের মোড়। তার জীবনের গল্প হয়ে যায় জীবনের চেয়ে বড়। গল্পটি ধানমণ্ডি থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানের রাইবেন্ড, আফগানিস্তান, গুয়ানতানামো বে, আলবেনিয়ার তিরানা হয়ে গিয়ে ঠেকেছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বারবাডোজে। এর মাঝেই ওমারের জীবনে ঘটেছে নানা আখ্যান। ওমারের সাথে তার আসমান আসমার বিয়ে হওয়ার ১৪ দিন পরেও তাদের জীবনে অনুপ্রবেশ ঘটে বিচ্ছেদের। এক পর্যায়ে তাকে আটকে রাখা হয় কিউবার কুখ্যাত গুয়ানতানামাে বে কারাগারে। বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় ১২ বছর। ওয়াশিংটন টাইম যখন এ খবর প্রকাশ করে তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে টেরোরিস্ট মনে করে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাহলে কোথায় যাবে এখন এই গৃহহীন মানুষটি। কেনইবা তাকে আটকে রাখা হল সেই গুয়ানতানামাে বে কারাগারে। যেখানে জায়গা হয় পৃথিবীর দাগী দাগী আসামীদের।

গল্পের প্রধান চরিত্র ওমার। বিভিন্ন বিষয়ে তার রয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞান। অশান্তি ভুলে থাকতে তাকে নেশায় জড়াতে দেখা গেলেও তাকে কখনো বখাটে বা বাজে ছেলে বলা যায় না। তাই তো সে নেশা ছেড়ে খুঁজেছে যেখানে জীবনের প্রশান্তি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। গল্পের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলা যায় ইমাম সাহেবকে। তার মাধ্যমেই গল্পে তুলে ধরা জীবনের বোধ, জীবনের প্রশান্তির ধর্মের প্রয়োজনীয়তা। এই চরিত্রের মাধ্যমে লেখক প্রকাশ করেছেন তার গভীর ধর্মীয় জ্ঞান। যা আমাকে রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছে। গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম খালিদ। আর গল্পের নায়িকা চরিত্রের নাম আসমা। যাকে ওমার ডাকে আসমান। আমি তোমার একলা পাখি, তুমি আমার আসমান। তাদের মাঝে ভালোবাসার বর্ণনা দীর্ঘ পরিসরের না হলেও অতটুকুই গেঁথে যাবে হৃদয়ের গহীনে। এছাড়া গল্পের আরো একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র ওমারের বন্ধু রুশো। উঠতি ব্যান্ড শিল্পী। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলো হচ্ছে ওমারের মা, আনোয়ার, জনাথন, শিমুজি। শিমুজি চরিত্রটি গল্পের অন্যতম এক টুইস্ট।

এই বইয়ের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হচ্ছে প্রামাণ্য ইতিহাস বর্ণনা। বইটির প্লট বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের। তৎকালীন আফগানিস্তানের ইতিহাসে সকল গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং ব্যক্তিত্বের কথা উঠে এসেছে লেখকের লেখনীতে।এতে লেখক উপন্যাস লিখতে গিয়ে কী পরিমান স্টাডি আর পরিশ্রম করেছেন তা বুঝা যায়। লেখক খুব বিচক্ষণ ভাবে উল্লেখ করেছেন তাবলীগের সূচনার ইতিহাস। যা দেখে আমার হতভম্ব হওয়ায় সীমা ছিল না। এ ছাড়া লেখক উপন্যাসের অনেক জায়গায় সর্বশ্রেষ্ট গ্রন্থ পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেছেন, সুরা ও আয়াত নাম্বার সহ। যাতে মুগ্ধতা ক্রমে ক্রমেই বেড়েছে। যতই এগিয়েছি লেখকের জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছি।

বইটিতে সবকিছু পেয়েছি ধর্ম, ইতিহাস, বিজ্ঞান, যুদ্ধ, প্রেম, বিরহ, টানটান উত্তেজনা, স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এ সমস্তই অসাধারণ অতুলনীয় নিপুণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। ইসলাম যে কত সুন্দর একটি জীবন বিধান তা বইয়ের পাতায় পাতায় সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। একইসাথে বইটি তথ্যসমৃদ্ধ। এ থেকে অনেক অজানা তথ্য আমি জেনেছি। বইটা পড়ার পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আরো গভীর ভালোবাসার দৃঢ়তায় পরিণত হয়েছে।

বইয়ের কিছু অসাধারণ উক্তিঃ-

♦হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এইজন্যে যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন।

♦তোমার হাতে তেমার কোনো প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যেকোন সময় তা কেড়ে নেওয়া হবে,এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হলো যা পেয়েছো তার জন্য এত উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছো তার জন্য এতো বিষাদের কিছু নেই।

♦ইসলাম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়। এটা যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাস।

♦যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাসই হলো বিশ্বাসের আসল শক্তি। যে শক্তির অনেক প্রভাব।

♦যে আল্লাহকে ভয় পায় না সে পৃথিবীর সবকিছুকেই ভয় পায়। আর যে আল্লাহকে ভয় পায় পৃথিবীর সবকিছু তাকে ভয় পায়।

♦পৃথিবীতে সে তার নিজের ইচ্ছায় আসেনি, নিজের ইচ্ছাতেও তার যাওয়া হবে না। তাহলে মধ্যবর্তী এই সময়টুকুতে নিজের ইচ্ছা তৈরি করবে কেন?

♦কঠিন কথাকে যে শিল্পী সহজভাবে বলতে পারে সেই সার্থক শিল্পী।

♦”দুনিয়া বিচ্ছেদের জায়গা, মিলনের জায়গা জান্নাত।”

♦”মুসলিমদের মেরুদণ্ড সেদিন থেকেই ভাঙা শুরু হয়েছে যখন তারা দ্বীনি বন্ধন বা উম্মাহ থেকে ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদী পরিচয়ে পরিচিত হতে শুরু করেছিল।”

গল্পের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আফগানিস্তান। লেখক আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল,পাহাড়ী উপত্যাকা, নদী, নালার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে আমি নিজেই যেন চষে বেড়াচ্ছি সেখানে। এই বইয়ে আপনি যেমন বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনার নাম পাবেন তেমনি পাবেন আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত মালার সাংলাক রেঞ্জে জন্ম নেয়া কাবুল নদী, হেলমান্দ, হারি, আরগান্দাব, কুনার, পাঞ্চ, মুরঘাব, গোমাল, ফারাহ, ককচা, পাঞ্চশির, ওয়াখান, পিচ, আলিনাগার, খুররাম, মুসা কালা এবং আমু দরিয়ার। এগুলোর নাম পড়ে লেখকের ডেডিকেশনের মাত্রাটা ভালোভাবেই উপলদ্ধি করা যায়।

Md Tajul Islam

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬৯

আমার পড়া সেরা বইয়ের ভেতর এটা অন্যতম। এক কথায় আমি সসম্মোহিত ! সবদিক দিয়ে এই বই সর্বেসর্বা । বইয়ের মূল চরিত্র ওমারের মাধ্যমে শিবলী ভাই ১৯৯৬-২০১২ পর্যন্ত আফগানিস্তানের সব ঘটনা ব্যাখা করেছেন । যার মাধ্যমে দারুণ কিছু ঘটনা, আফগানিস্তানের তৎকালীন অবস্থা আমি জানতে পেরেছি । তাছাড়া এভাবে কাহিনির ব্যাখ্যা, রচনাশৈলী, প্রত্যেক চরিত্রকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা, আন্তর্জাতিক ঘটনা বইয়ের কাহিনির ভেতর একচ্ছত্র তুলে ধরা আমার কাছে এককথায় অসাধারণ লেগেছে

Article link

 


পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৭০

বইটির প্রচ্ছদে লেখা আছে ‘যে গল্প জীবনের চেয়েও বড়’।

বইটির প্রথম দর্শনে আমার অনুভূতি ছিলো, প্রচ্ছদ এতো বাজে কেন! সত্যি বলতে প্রচ্ছদ একটুও পছন্দ হয়নি। রঙ কিংবা ডিজাইন, ফন্ট, সজ্জা কোনোটাই পছন্দ হয়নি। তাই প্রথমে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কিনিনি। কিন্তু লেখকের প্রথম উপন্যাস দারবিশ পড়ার সুবাদে লেখনী সম্পর্কে ধারণা ছিল এবং মনে হয়েছিল, এই বইটাও ভালো হবে।

বইটি নিরাশ করেনি। যে আশা নিয়ে বইটি পড়তে বসেছিলাম সে আশার চেয়ে অনেক বেশিই পূরণ করেছে বইটি।

গল্প শুরু হয় ১৯৯৬ এর সেপ্টেম্বরের বর্ণনা দিয়ে। ধানমন্ডির আট নম্বর রোডের জামে মসজিদের বৃদ্ধ পেশ ইমাম মাওলানা ইসহাক আব্দুর রহমান এর কিছু কথা দিয়ে-
‘হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকালেই শুরু হবে জাগতিক অশান্তি।’

এই কথাগুলো তিনি বললেন ওমার কে। ওমার রিজওয়ান। গল্পের মূল চরিত্র। বিশ্বাস ভাঙা এক যুবক। মনের ভেতর উথাল পাতাল করা ঝড়। হতাশা কাটানোর জন্য নেশা, গান এর আশ্রয় নেয় সে। কিন্তু কোনোকিছু তে শান্তি পায় না। স্মৃতি তাড়া করে ফেরে।

কিন্তু মনের ভেতরের অশান্তি ইমাম সাহেব টের পেলেন কি করে?
ইমাম সাহেবের মজার ছলে দেয়া জবাব, ‘তিন ধরনের লোক মসজিদের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ফকির, জুতা চোর আর মজনু। তুমি মজনু শ্রেণির লোক।’

গল্পের শুরুটা কৌতুহল উদ্দীপক। বোঝাই যায় আর দশটা সাধারণ গল্পের মতো এটা না। লেখকের এ যেন নতুন এক্সপেরিমেন্ট। এবং লেখক, আমার দৃষ্টিতে, সফল।
এরপরই গল্পে আসে রুশো, ওমারের বন্ধু। ওমার কে নেশা ধরিয়েছে যে। নিজেও একজন এডিক্টেড। পছন্দ করে সাইক্যাডেলিক আর প্রোগ্রেসিভ রক মিউজিক। জীম মরিসন কে ‘গুরু’ মনে করে। তাকে শুধু গায়ক না, বরং একজন ‘প্রফেট’ হিসেবে দেখে। নিজেও গান গায়, লেখে। এবং এতোই দুর্বোধ্য লেখে যে কেউ তা ধরতেও পারে না, নিজেও না! রুশোর স্বপ্ন একদিন বাংলাদেশের তরুণ তরুণিরা তাকে গুরু হিসেবে মেনে নেবে। সে গান না, দর্শন ছড়াবে। নিজস্ব জীবন দর্শন। কিন্তু রুশো তার দুর্বোধ্য লিরিক্স, গান নিয়ে ব্যর্থ হয়, জীবন দর্শন ছড়াতে ব্যর্থ হয়। এরপর?

এরপর যখন রুশো গেয়ে ওঠে,
‘জাস্টিস জাস্টিস
এটা কার কন্ঠস্বর
ওয়ার ক্রিমিনাল
অথবা লিবারেটর!
কার আদলে কে?
নাৎসি? জায়োনিস্ট?
কারো চোখে তুমি স্বাধীনতাকামী
কারো চোখে টেরোরিস্ট।
কার আদলে কে
উত্তর দেবে তোমায়
গুয়ানতানামো বে।’
এরপর রুশো হয় যায় প্রতিবাদী তারুণ্যের কন্ঠ। রুশো দুর্বোধ্যতা থেকে বেরিয়ে সহজ দর্শন কে প্রকাশ করে। এই যে দুর্বোধ্যতা থেকে সহজের পথে যাত্রা, এটাই জীবন। আর এই জীবনের গল্পটা লিখে গিয়েছেন লেখক।

গল্প বিস্তৃত হয়েছে আর ছুঁয়ে গিয়েছে বিচিত্র সব বিষয়কে। ধারণ করেছে বিভিন দর্শন। সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, দেশ, জাতি, যুদ্ধ, স্বাধীনতা, পরিবার এবং, ভালোবাসা। এই যে বিচিত্র বিষয় কে লেখক একখানে করেছেন, তাতে বইটা ঘেটে ঘ হয়ে যায় নি, বরং মনে হয়েছে আরেকটু বিস্তৃত কাহিনী হতে পারতো, আরেকটু জানা যেত বিষয়গুলো নিয়ে! বইটা ছোটো হয়ে গেল!

বইয়ের গল্প বাংলাদেশ থেকে গিয়ে ঠেকেছে আফগানিস্তানে, সেখান থেকে গুয়ানতানামো বে। এরপর আলবেনিয়ার তিরানা।

ওমার কে ইমাম সাহেবের আছে পাঠিয়েছিলেন ওমার এর মা। তিনি জানতেন, আল্লাহ চাইলে ওমার আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই যাত্রার বর্ণনাটা, অন্ধকার থেকে আলোতে যাত্রা, বইয়ের প্রথম অধ্যায় হিসেবে ধরা যেতে পারে।

বিশ্বাস করা এবং বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া, একুশ শতকের খুব সাধারণ ঘটনা। অহরহই হচ্ছে। কিন্তু এই সাধারণ ঘটনা মানুষের উপর কি অসাধারণ প্রভাব ফেলে সেই বর্ণনাটা তুলে এনেছেন লেখক। মানুষ বিশ্বাস করতে ভালোবাসে, বিশ্বাস ভাঙতেও। ওমার বিশ্বাস করেছিল, সেই বিশ্বাস একজন ভেঙে দিয়েছে। ওমার সেই ভাঙা বিশ্বাস আর জোড়া লাগাতে পারছিল না, বেঁচে ছিল, কিন্তু বেঁচে থাকতেও পারছিল না। ড্রাগস, মিউজিক, ফিলোসফি, এডভেঞ্চার কোনো কিছুই তাকে স্বস্তি দিতে পারেনি। শেষমেশ তাকে স্বস্তি দিয়েছে, আল্লাহ। যেখান থেকে যাত্রা, যার থেকে যাত্রা তারদিকে ফিরে আসাতেই স্বস্তি নয়কি?

ইমামের সান্নিধ্যে ওমার বদলে যেতে শুরু করে। নিজের ভেতরে অন্য এক ওমারকে অনুভব করতে শুরু করে। এই ওমার কে আপনিও অনুভব করতে পারবেন। ওমারের বদলে যাওয়ার জার্নিটা লেখক অনেক সুন্দরভাবে ফুটীয়ে তুলেছেন। অনেকটা দার্শনিক ভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমামের সাথে ওমার মেতে উঠেছে ধর্ম নিয়ে, ধর্মের দার্শনিক ব্যাখ্যায়। এই অংশটা খুবই উপভোগ্য। অসংখ্য লাইন আছে যা ভাবাবে, ভালো লাগবে।

এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় অধ্যায়। এপ্রিল ১৯৯৮। ওমারের পাকিস্তান যাত্রার মাধ্যমে। এই যাত্রা ছিল ইজতিমায় অংশ নেয়ার জন্য। আর এই ইজতিমা থেকে ওমারের জীবনে বাঁকবদল ঘটে।

এই অধ্যায়ে আছে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভ্রমণকাহিনী আর অপার্থিব ভালোবাসার বর্ণনা।
এই অংশে যে ইতিহাসটুকু বর্ণিত হয়েছে, সেই ইতিহাস আমার মতো অনেক মুসলিমই জানেনা হয়তো। ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বলে কিন্তু মানব মন থেকে ধূসর হয়ে যাওয়া গর্বের ইতিহাস।

এই অধ্যায়ে আপনি এমন একজন কে পাবেন, যিনি তাঁর মৃত্যুর পরও, বিজাতীয়দের মধ্যেও অনেক জনপ্রিয়। মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি। ওনার কিছু কবিতার অনুবাদ আপনি পাবেন। মাওলানার কবিতার সাথে আপনি স্বাদ পাবেন পবিত্র, অপার্থিব এক ভালোবাসার। আপনি মনে মনে চেয়েও ফেলতে পারেন এমন ভালোবাসা নিজের জীবনেও আসুক, চুপিসারে। মনে ঠাই করে নিক। যে ভালোবাসায় কোনো পঙ্কিলতা নেই। যা সৃষ্টি কর্তার অনুগ্রহ।

এই অধ্যায়ের সবচেয়ে চমকপ্রদ দুটো ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনার আভাস আমি দিলাম, আরেকটা ঘটনা আপনাকে পড়ে জেনে নিতে হবে। এই অংশটা নিয়ে কিছু বলতে গেলেই মনে হচ্ছে স্পয়লার দিয়ে ফেলবো!

এই অধ্যায়ের শেষটুকু আপনাকে আঘাত করলেও করতে পারে। আপনি প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন সেসব ঘটনার জন্য। আসলে এই অধ্যায়ের পুরোটা অতীত এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে একজন মানুষের জীবনের অনাকাঙ্খিত কিন্তু অনিবার্য পরিণতির কথা বলে। পাঠককে আটকে রাখে।

এরপর তৃতীয় অধ্যায়। ক্লাইম্যাক্স। ওমারের জায়গা হয় গুয়ানতানামো বে তে। কেমন ছিল ওমারের গুয়ানতানামোর দিনগুলো? কিভাবে কাটলো দিনগুলো? কিভাবেই বা সে এখানে আসলো? এই অধ্যায়ের মাঝামাঝি অংশটা বইয়ের ফ্ল্যাপে দেয়া আছে। বিনা বিচারে জেল খেটে ওমার মুক্তি পায়। কিন্তু বাংলাদেশ তাকে জঙ্গী চিহ্নিত করতে ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাঁর জায়গা হয় আলবেনিয়ার তিরানায়। এরপর কি হয়? ওমার তাঁর সব হারিয়ে ফেলে কি কিছু ফেরত পায়? কেউ কি তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসে?
শেষ চমকটা আপনার অপেক্ষা করছে…

বইটা মানুষের অনাকাঙ্খিত কিন্তু অনিবার্য পরিণতির কথা বলে। নিয়তির কথা বলে। সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা দেয়। ভাবতে সাহায্য করে। ধর্মকে শুধু আচার অনুষ্ঠানে বেঁধে না ফেলে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ ইসলাম কখনোই শুধু আচার নির্ভর ধর্ম না, ইসলাম কে সবসময় পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা বলা হয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বার্তাটা দেয়, সেটা হলো, “নিশ্চয় কষ্টের পরে রয়েছে স্বস্তি…” সেই স্বস্তিটা খুঁজে নিতে হয়, সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে, তাঁর প্রতি নিজেকে সমর্পন করে, তাঁকে ভালোবেসে।

বইটা টানা পড়েছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো। বইয়ের নেগেইটিভ পয়েন্ট বলতে কিছু ইংরেজি শব্দের ব্যবহার যা সহজে বাংলাতেই বলা যেত। “ওমার খুব এনজয় করে” এর বদলে “ওমার খুব উপভোগ করে” এটা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।

বইটি এর প্রচ্ছদের কথাটির মান রেখেছে, ‘যে জীবন গল্পের চেয়ে বড়’…

বই থেকে-

‘বিচ্ছেদের কথা মাথায় রেখেই ভালোবাসতে হবে…’

‘বাইন মাছ কাদার ভেতর থেকেও মাছের গায়ে কাঁদা লাগে না। তুমি বস্তুর সমুদ্রে থাকবে কিন্তু বস্তু তোমাকে ডুবাতে পারবে না। তুমি বস্তুকে ভোগ করবে কিন্তু বস্তু তোমাকে ভোগ করতে পারবে না। যখন বস্তুর লোভ মানুষকে খেয়ে ফেলে তখন সেই মানুষের জীবন হয় পশুর মতো।’

‘আমি প্রেমে পড়ার পূর্বেই প্রেমের গল্প বলেছি,
কিন্তু আমি যখন প্রেমে পড়লাম
তখন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।’- জালালুদ্দিন রুমি

‘এই মধ্য এশিয়ান জোছনায় সিল্করোড ধরে নিঃশব্দ ছায়া ফেলে চলে যায় যে ক্যারাভ্যান তার নাম ইতিহাস৷’

তানভীর ফুয়াদ রুমি

Article link

 

 


 

 

Related posts