পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪১
নিজের যোগ্যতার বাইরে কিছু করতে গেলেই সাধারণত মানুষ নার্ভাস ফিল করে।
লতিফুল ইসলাম শিবলী স্যারের আসমান উপন্যাসটি শেষ করেছি ১০-১২ দিন হচ্ছে। এই উপন্যাস নিয়ে কোন কিছু লিখার সাধ্য আমার নেই। তাই অনেকবার লিখতে বসেও পারিনি।
শুধু এটুকু বলতে চাই যে/যারা বইটি পড়েছে তাদেরও নিশ্চই আমার মত আফসোস হচ্ছে।
উপন্যাসের ওমর চরিত্রকে নিজের জীবনে ফুটিয়ে তোলার লোভ আমার পিছু নিয়েছে।আসমান উপন্যাসের ইমামের মত কোন মানুষের সঙ্গ পেতে চাই।
এমন বই একটা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই।
শিবলী স্যারের জন্য ভালবাসা।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪২
লতিফুল ইসলাম শিবলী রচিত আসমান বইটি পড়লাম। ভালো লাগলো।
এটি একটি উপন্যাস। প্রেমে ব্যর্থ এক মেধাবী যুবকের বখে যাওয়ার চিত্র দিয়ে শুরু হয় বইটির গল্প। যুবকটি তার মায়ের নির্দেশে এক প্রাজ্ঞ ইমামের সংস্পর্শে এসে তাঁর অমিয় বাণী শ্রবণ করে শূন্য হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করে। তারপর ঢাকা থেকে পাঞ্জাব, কাবুল থেকে কান্দাহার, যুদ্ধ থেকে জেলে। সব চরিত্রেই যুবকটির বুদ্ধি, সাহস, সততা ও বাগ্মিতা প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশ থেকে যুবকটি গেছে আফগানে।
লামিয়াকে হারিয়ে সে পেয়েছে আসমাকে।
মদের নেশা ভুলে সে চেয়েছে জান্নাতের শরাব।বইটি পড়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি লেখকের জ্ঞানের সমৃদ্ধিতে। তার তথ্যের সত্যতা, উপাত্তের প্রাচুর্যতা ও দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতায় আমি বিমোহিত। (ধন্যবাদ, লতিফ ভাই)।
অনেকে উপন্যাস লেখেন এবং তাদের উপন্যাসে কোথাও কোথাও ইসলামি বিষয়ের অবতারণা ঘটান। কিন্তু জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। লতিফ ভাই তাদের থেকে ভিন্ন। বইটি পড়ে তাকে আমার পাক্কা ইসলামি স্কলার মনে হয়েছে।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৩
আসমান………..
যে গল্প জীবনের থেকেও বড়……কর্ম ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন হল কোন উপন্যাস পড়া হয়ে ওঠে না। এইবার বইমেলাতে শিবলী ভাই এর তৃতীয় উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। আর ভাই হিসাবে তো এই উপন্যাস না পড়লেই না।
একদিন অফিসের পরে সময় করে চলে গেলাম একুশে বইমেলা তে শিবলী ভাইয়ের তৃতীয় উপন্যাস আসমান সংগ্রহ করার জন্য। বাড়তি পাওয়া হিসাবে ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল।
আমার শৈশবের প্রতিটি দিন আর নির্ঘুম প্রতিটি রাতগুলো কেটেছে এই মানুষটার লেখা গান শুনে শুনে। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এই গানগুলো মনে হয় আমার জন্যই লেখা। আর আরো অবাক হতাম যে আমার ভেতরের অব্যক্ত কথাগুলো এই মানুষটা জানল কেমন করে? ঠিক তখন থেকেই এই মানুষটিকে খুব আপন বলে মনে হয়েছে। আর মনে মনে একটা গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছিলাম।
এর আগেও শিবলী ভাই এর লেখা দুটি উপন্যাস আমি পড়েছি, দারবিশ আর দখল। এই মাত্র শেষ করলাম আসমান. অসম্ভব সুন্দর একটি উপন্যাস। নিকটবর্তী একটা অতিবাস্তব ঘটনাকে যে এত সুন্দর ভাবে গল্পের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা যায় তা চিন্তার বাহিরে। বইটা পড়া শেষ হয়ে গেছে কিন্তু গল্পের রেশ এখনো মনের মাঝে থেকে গেছে। গল্পের নায়ক ওমার ও নায়িকা আসমা কে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে চিনি। কান পাতলেই যেন ওমর বলছে,আমি তোমার একলা পাখি…
তুমি আসমান………শিবলী ভাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা উপন্যাস উপহার দেয়ার জন্য। যুদ্ধ, ভালবাসা প্রেম, বিচ্ছেদ কে এত সুন্দর করে গল্পটার মাঝে ফুটিয়ে তোলার জন্য।
পরের উপন্যাসের অপেক্ষায় থাকলাম..
Love you Brother. Latiful Islam Shibli
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৪
বাংলাদেশ থেকে আমার জন্য প্রচুর বই আসে, আমার হাসবেন্ড এর বন্ধু তার কলিগ সবাই আমার জন্য বই পাঠান, আমার হাসবেন্ড এর যেহেতু প্রতি মাসেই আশা যাওয়া তাই বই গুলো চাহিবা মাত্র পেয়ে যাই, সে হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে করি। আর ফেব্রুয়ারী তে তো কথাই নেই বই পাবোই, এই বার ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বলে রেখেছিলাম লতিফুল ইসলাম শিবলীর আসমান বইটা আমার জন্য পাঠাতে. যথারীতি বই এলো, গত রাতে এক নিশ্বাসে শেষ করলাম, আফগান যুদ্ধ সম্পর্কে অতটা জানা ছিলোনা। বইটি পড়ছিলাম লন্ডনে বসে কিন্তু আমি ছিলাম আফগানিস্থানে। এতো মায়াময় আর জীবন্ত উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ আর আবেগাপ্লুত করেছে, গল্পের শেষে মিলনে বেরিয়েছে আনন্দাশ্রু !
মুচড়ে উঠছে মন বারবার !
আমার এতো কান্না পাচ্ছে কেন !
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৫
কিছু গল্প অলীক। কল্পনার জগতে তার জন্ম। পাঠককে অবাস্তব কিংবা পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা দেয় সেসব গল্প।
কিছু গল্প সত্যি। সত্য ঘটনাকে গুছিয়ে বলা হয় তাতে। শহুরে মানুষের কৃত্রিম জগৎ থেকে বাস্তবে আনা হয় আসল বাস্তবতা। আসমান উপন্যাসটির স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো।
জীবনে তো কতই উপন্যাস পড়লাম, কিন্ত এই বইটি শেষ করার পর যে আশ্চর্যরকম অনুভূতি হচ্ছে তা আগে কখনও হয়নি। মনে হচ্ছিল আমিই যুদ্ধ করছি, আমিই মৃত্যুযন্ত্রণা অনুভব করছি। মন চাচ্ছিল গল্পটা শেষ না হোক। আফগানিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত পথে-প্রান্তরে কল্পনায় ঘুরে আসতে চাইলে এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ, আপনার সময় বৃথা যাবে না।
___ওমার আসমার কানের কাছে ফিসফিস করে ফারসিতে আবৃত্তি করল___
যখন আমি ঘরে থাকি
বুকে তুলে রাখি।
যখন আমি বাইরে থাকি
মাথায় তুলে রাখি।
এছাড়া আর রাখব কোথায়?
হয় না সংকুলান,
আমি তোমার একলা পাখি
তুমি আসমান।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৬
উড়ে উড়ে আপনি আর কতদূর যাবেন? আপনি ওমার যদি পাখি হতে পারেন তবে আমি আসমা, আসমান হয়ে যাবো। কোথায় যাবে, কতদূর যাবে পাখি আসমান ছেড়ে! আমি সে পাখির জন্য আসমান হয়ে থাকবো।
বই টা পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি…এক কথায় অসম্ভব সুন্দর একটা উপন্যাস আসমান। জীবন সুন্দর। হয়তো অনিন্দ্য সুন্দর। যে গল্প জীবনের চেয়েও বড় কথাটা আসলেই যথার্থ এই বইয়ের জন্য। বই টা এতটাই ভালো লেগেছে যে এক বসায় শেষ করে ফেলেছি। বইয়ের শেষ টা ছিল খুবই চমৎকার।
এই প্রথম কোনো বই এর রিভিউ লিখলাম।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৭
Latiful Islam Shibli ভাই
ইমাম- ওজু করে জামাতে এসো।
ওমার- নেশা অবস্থায় কি নামাজ পড়া যায় ।
ইমাম – নেশাই তো আমাকে মসজিদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।আবার, টর্চের আলোর উদাহরণ টা বেশ ভালো
লেগেছে ।আমার এক বন্ধু বললো, দোস্ত আমি শিবলী ভাইয়ের আসমান পড়ার পর থেকে নামাজে যাওয়া শুরু করেছি, নেশা করা বাদ দিয়েছি।
যে বই পড়ে মানুষের এতো পরিবর্তন হলো, সে বই পড়ে না দেখলে কেমন দেখায়…!
বই পড়ে ভালো লেগেছে,,, ঘটনা সত্য, স্থান সত্য, হয়তো চরিত্র গুলোও সত্য,,,,।
অসাধারণ লেখনি ভাই..
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৮
বইটি পড়া শেষ হয়েছে চার পাঁচদিন হয়েছে কিন্তু বইটির লেখকের লেখা প্রতিটি লাইনের মাধুর্য এখনো হৃদয়ে স্পর্শ করে রেখেছে। বইটি সম্পর্কে মতপ্রকাশের ভাষা আমার মত ছোট মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বইটি পড়ে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি, মানবজীবনে সব সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে ধর্মের পথ অবলম্বন করে চলা, স্রষ্টার প্রতি প্রেম নিবেদন করাই হচ্ছে আসল প্রেম আর এই প্রেম নিবেদন করা হচ্ছে, হে স্রষ্ঠা তুমি আমার সৃষ্টিকর্তা আমি তোমাকেই পেতে চাই, এই আরাধনায় নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখা এবং স্রষ্ঠার সৃষ্টির প্রেমে বিভোর হওয়া।
লেখকের প্রতি জানাই অকৃত্রিম ভালবাসা এত সুন্দর একটি বই উপহার দেয়ার জন্য। শুভকামনা রইল ভবিষ্যতেও যেন উনি আমাদের এইরকম ধর্মতাত্ত্বিক বই উপহার দিতে পারেন।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪৯
আসমান, উপন্যাসটির শুধু নাম নয়, আসমানের মত হৃদয় নিয়ে লিখা। জীবন, রাষ্ট্র, সমাজকে অনুভব করে লিখা একটি উপন্যাস। পড়ার পরে শরীর জুড়ে একটা সুন্দর অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল। দারবিশ পড়ার পরেও একই অনুভূতি হয়েছিল।
আমার কাছে মনে হয়েছে আসমানের মূল থিমঃ
– ১) হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এই জন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহর থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকালেই শুরু হবে তোমার জাগতিক অশান্তি।
– ২) তোমার হাতে কোন প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যেকোন সময় তা কেরে নেওয়া হবে,এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হল তুমি যা পেয়েছ তা নিয়ে এতো উল্লাসের কিছু নেই আবার যা হারিয়েছো তা নিয়ে এতো বিষাদেরও কিছু নেই।– আমার মনে হয়েছে এই দুইটি বিষয় কে লেখক পুরু উপন্যাসে সুচারু ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে।
– আমি সবসময় অনুভব করি শিবলী ভাইয়ের লিখার ভেতরের কাব্যময়তা। তাঁর গান,কবিতা,উপন্যাস সব জায়গাতেই কাব্যময়তা আর তথ্য সমৃদ্ধ উপস্থাপন। আসমানেও তা অনুভব করেছি।পেয়েছি অসাধারণ কিছু Dialogue।
– আপনার কাছে থেকে আর ও সুন্দর কিছুর অপেক্ষায় থাকলাম।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৫০
আমি কখনোই নিজেকে যে কাজের জন্য উপযুক্ত মনে করিনি আজ সেটা করতে গিয়ে খানিকটা দ্বিধায় পড়েছি। মন বলছে রিভিউটা লিখ। সাহসী হও। যোগ্যতা বলছে দূরে থাক। আমি কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষে সাহসী হলাম। নির্বোধের সাহসের অভাব হয়না। আমি নির্বোধ এবং সাহিত্যে একেবারেই মূর্খ। সাহসী হবোনা কেন?
১মার্চ রাতে আমি “আসমান” নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। রাতের খাবার ও বাচ্চাদের ঘুমের আয়োজন শেষে দীর্ঘদিন পর একাডেমিক বইয়ের বাইরে পুরনো অভ্যাসের ঝালাই করতে চাইলাম আসমান হাতে; কয়েক পৃষ্ঠা দ্রুত পড়ে ফেললাম- এ কি ঝড় বয়ে গেল পাতার পর পাতায়! এও কি সম্ভব! সোজা হয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে আবারো প্রথম থেকে পড়লাম। এভাবেও লেখা যায় তাহলে! এতটা গভীর, এতটা বিস্তৃত করে! প্রায় অস্পৃশ্য- ছুলেই বিতর্কিত হবার ঝুঁকি, তবু কতটা বাস্তবতার নিরিখে তৈরী হয়েছে সময়ের সবচেয়ে সাহসী গল্প- আসমান।
দূষিত সামাজিক সম্পর্ক, কলুষিত ছাত্র রাজনীতি, মাদকের কড়াল গ্রাস, সন্ত্রাস, ধর্ম, ইসলামের প্রকৃত রূপ, রূপক ও স্বরূপের উন্মোচন, খিলাফতের ব্যাখ্যার শক্তি ও দূর্বলতা, জিহাদের সঠিক সংজ্ঞা ও তার বহুমাত্রিক ব্যবহার, মহান আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান, ঈমানের পরীক্ষা ও তার জন্য ধৈর্য্যধারণ, আঘাতে-বিচ্ছেদে-করুনতম মুহূর্তেও ঈমানের প্রতি অবিচল থাকা, ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে উপন্যাসের চরিত্রগুলোর এগিয়ে চলা, শত্রুর হৃদয় জয় করে সারা পৃথিবীতে নিগৃহীত- ঠিকানা বিহীন হয়েও স্ত্রী-সন্তানের সাথে মিলনে সমাপ্তি ওমার রিজওয়ানের।
গল্পের শুরুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন আধুনিকমনা, মেধাবী, প্রেমে প্রতারিত, আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসা, প্রচন্ড হতাশায় বিপথগামী, নেশাসক্ত তরুনের সাথে আধুনিকমনা, প্রাজ্ঞ, ধীরস্থির, ইসলামী দার্শনিক, উদারমনা একজন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কথোপকথনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে দুটি ভাগে গল্প এগিয়েছে। প্রথম ভাগে, স্বদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ওমারের এক আকাশ স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের অনবদ্য চিত্র। সহপাঠী ও সাময়িক সময়ের প্রণয়িনী লামিয়ার ঝড়ো সম্পর্কের ভাঙ্গা-গড়ার গল্প। যে লামিয়াকে একদিন নাম দিয়েছিল মাটি, সে লামিয়ার প্রতারণায় জীবনের অন্ধকার অংশের শুরু হয় গল্পের মূল চরিত্র ওমারের।এসময়ে তাকে মায়ের অকুন্ঠ সমর্থন ও ভালবাসাই প্রেরণা যোগায়। ইমাম সাহেবের দার্শনিক বিশ্লেষণে তার ইসলামের প্রতি আগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহর প্রতি ঈমান সুদৃঢ় হয়।
দ্বিতীয় ভাগে তাবলীগের সাথী হয়ে তাকে পাকিস্তান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যি গুলোর মুখোমুখি হতে হয়। তালেবান শাসন, ইসলামের শক্তি ও ভ্রান্ত ধারণার সাংঘর্ষিক অবস্থান, খিলাফত প্রতিষ্ঠায় স্বীয় ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ, মৃত্যুর মুখ হতে ফিরে আসা এবং অমোঘ সত্যের উপলব্ধি- “যে মানুষ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কলেমায়ে তৈয়্যেবা সশব্দে পাঠ করে চলেছে, আমি তাঁকে হত্যা করতে পারিনা।”এ ভাগে এসে আসমার সাথে প্রণয় ও অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে পরিণয়- আসমাকে ওমার কবিতায় ঘোষণা করে “আসমান” বলে।
অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গুয়ান্তানামো বে কারাগারের নারকীয় অত্যাচারের বর্ননাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশে থাকতে নেশাগ্রস্ত সময়ের বর্ণনা বরং অনেক প্রাঞ্জল। এর প্রয়োজন ছিল। নিষ্ঠুরতায় নয়, ওমারকে মানুষ খুঁজে নেবে ভালবাসায়, প্রেমে- এটা একটা অবশ্যম্ভাবী চাওয়া পাঠকের-লেখকেরও! এটিই সম্ভাব্য সমীকরণ। সমাপ্তির অংশে আরেকটু সময় কাম্য ছিল। এ বিশাল পৃথিবীতে একজন ঠিকানাবিহীন মানুষের প্রতি সামাজিক আচরনের বহুমাত্রিকতা অনুপস্থিত ছিল। তবে অনুতপ্ত নও মুসলিম জাপানি গুপ্তচর শিমুজির ওমারের প্রতি আত্মসমর্পণ এর অভাব অনেকটা দূর করেছে।
সাহিত্যে সুফিবাদের সময়কালকে বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আমরা পেয়েছিলাম হাফিজ, ওমর খৈয়ামসহ পারস্য সাহিত্যের দিকপালদের রচনাবলী। আধুনিক সাহিত্য বহুমাত্রিকতায় এগিয়ে চলেছে কিন্তু সুফিবাদ এড়িয়ে গেছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। এরচনার দ্বারা সুফি সাহিত্যের অপ্রকাশিত লড়াই এর সূচনা হল।
সম্ভব হলে আমি স্কুল গুলোতে নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রদের জন্য এ বইটিকে অবশ্য পাঠ্য করে দিতাম। গোঁড়া মুসলিম উম্মাহ্ মুক্তি পাবে যদি অন্তরে অস্পষ্ট ব্যাখ্যার ধর্ম নয়, নর-নারীর প্রেম নয়, জান্নাতের লালসা নয়, ভুল নেতৃত্বের খিলাফত নয়, ক্রোধ কিংবা অন্ধ আক্রোশ নয়, প্রতিশোধ নয়, সাময়িক সাফল্যের অহংবোধ নয়, অতি আবেগের দূর্বিনীত প্রকাশ নয়;
কেবল মহান আল্লাহকে অন্তরে ধারন করে, হৃদয় আল্লাহর ঘর- এ সত্য নির্মোহ ভালোবাসায় গ্রহণ করে, যাপিত জীবনের সকল ঘাত-প্রতিঘাতকে সহজ ভাবে গ্রহণ করে, নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে, জিহাদের জন্য সর্বদা নিজেকে তৈরী রাখে- জিহাদের স্বরূপ উম্মোচনে নিজের যৌক্তিক অবস্থান নির্ণয়ে অনুসন্ধানী হয়- সেই-ই খলিফা ওমার- ওমার রিজওয়ান! কিংবা খালিদ বিন আব্দুল্লাহ! অথবা, অনুতপ্ত জাপানিজ গুপ্তচর শিমুজি, নেশার মোহভঙ্গ তরুণ রুশো…১৫২ পৃষ্ঠায় এ জমিনে আসমান নেমে এসেছে। আর আমি আমার রক্তের অনেক দূষণকে চিনে গেছি।
আপনাকে ধন্যবাদ কবি।