পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩১
অমুসলিম লোকটি মাথা নিচু করে বসে আছে, তার হাত কাঁপছে, ঠোঁট চেপে ধরে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অবশেষে, অমুসলিম লোকটি ওমারের হাত চেপে ধরলো। বললো,
ওমার আমি মুসলমান হতে চাই। তোমার হাত ধরে ই হতে চাই।
উপরের অনুভূতিগুলো, আবেগগুলো, কথাগুলো আসমান বইয়ের, যার লেখক শিবলী ভাই।
বইটি ক্ষাণিক আগে পড়া শেষ করেছি, আর এখন পর্যন্ত উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছি। পুরোটা শরীর কাঁপছে, সেই সাথে মস্তিষ্কের কোষগুলো লাফাচ্ছে। বার বার বলেছে, কি পড়লাম? কি পড়লাম? কি পড়লাম?
বাস্তবিক জীবনে, অন্তত আমি নিজে, মানুষকে পড়ে খুশি হই।
মানুষের জীবন পড়ে আমি আনন্দিত হই, নাম না জানা গল্প থেকে আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষের গল্প শুনতে ভালোবাসি।
আর, তেমনিভাবে, এমন এক গল্পকে আমার সামনে তুলে ধরেছেন শিবলী ভাই।
শিবলী ভাইয়ের দারবিশ, দখল বই দুটো আমি আগে পড়েছি, তাই শিবলী ভাই কেমন আর কতটুকু লেখেন, তা আমার ধারণা আছে। কিন্তু, যেই বিষয় ধারণা একদম ছিলো না, তা হলো, নতুনত্ব।
প্রতিটি বইয়ের ভিন্ন ভিন্ন প্লট, ভিন্ন ভিন্ন আবহ আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করে। আমি দখল পড়ার পর কখনো ভাবি নি যে, দখল ছাড়া অন্য কোনো বই আমাকে এতোটা অভিভূত করবে।
কিন্তু, আমি ভুল ছিলাম। কারণ, গল্পকার নতুন কাহিনীর জন্ম না দিলেও কবি শিবলী ভাই নতুনত্বকে সৃষ্টি করেছেন।
আসমান বইটি এতো এতো এতো চমৎকার আর মনোমুগ্ধকর যে, বইটা পড়া শেষ হওয়ার পর আমার দুটি বিষয়ে খুব্ব বেশি আক্ষেপ আর কষ্ট হচ্ছে!
রাগের আর ক্ষোভ কারণঃ
এক. মাত্র একশ বায়ান্ন (১৫২) পৃষ্ঠা বই কেনো?
দুই. এতো দামি গল্পের এতো কম বিনিময় মূল্য কেনো?
আসমান বইয়ের চতুর্থ মুদ্রণ গতকাল এসেছে, স্বাভাবিক দরে হিসেবে করলে দুই হাজার (২,০০০) বই বিক্রি হয়েছে অথবা হালচাল দেখে বলতে গেলে দুই হাজার পাঁচশ বই বিক্রি হয়েছে এই বইমেলায়।
আমি নির্দ্বিধায় এবং নিঃসন্দেহে বলবো যে, যারা এখনো বইটি কিনেন নি, তারা প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত এবং চতুর্থত ঠকেছেন।
পঞ্চমত ঠকেছেন তারা, যারা বইটা কিনে নেওয়ার পর এখনো পড়েন নি।বইটি এখনো আরো অযুত পাঠকের হাতের কাছে যেতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশি পাঠক, মুসলমান ধর্ম সহ বাকি ধর্ম ওস ম্প্রদায়ের পাঠকরা ইসলাম, মুসলমান, জঙ্গি – এই শব্দগুলো সম্পর্কে কখনো জানতে পারবে না।
বুঝতে পারবে না।
শিখতে পারবে না।
আসমান এর একশ বায়ান্ন (১৫২) পৃষ্ঠা পড়ার পর আমার ইচ্ছে করছে, আমি কমপক্ষে, লেখকের কষ্টটাকে সার্থক করার জন্য পনেরো-বিশ পৃষ্ঠার একটা মন্তব্য লিখি।
কিন্তু, এতো বড়ো বই পর্যালোচনা আজকের সময়ে, কারোর পড়ার সময় নেই। তবুও, নিজের ভালোলাগা আর আবেগগুলোকে চেপে ধরে ছোট করে লেখার চেষ্টা করছি!
ওমার আজ আচমকা আসমার চোখের দিকে সরাসরি তাকালো, এক ঝলক তাকানো মাত্র সাথে সাথে চোখটা নামিয়ে নিলো।
আসমা ওমারকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার সময় ওমার উহ করে উঠলো, ব্যথার শব্দ শুনতে পেয়ে আসমা জিজ্ঞেস করলো, আজ ই প্রথম ব্যথা পেলেন বুঝি?
হে। ওমার ছোট্ট করে বললো।
মুচকি হেসে দিয়ে আসমা বলে, আল্লাহ আপনাকে একটু করে শাস্তি দিলেন।
কেনো? শাস্তি দিলেন কেনো? অনেকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলো ওমার।
কারণ, আজ প্রথম আপনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালেন।”আসমান বইয়ে গড়ে ওঠা নিষ্পাপ দুটি চরিত্রের কথোপকথনকে এতোটা নানন্দিক আর রুচিসম্মতভাবে তুলে ধরেছেন যে, আমি নিজেকে, পাঠক হয়ে, শব্দে আঁকা সবুজ চোখের আসমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি!
এটা সত্য এবং বাস্তব।
সবেমাত্র কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পদাপর্ণ করা ওমার তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়, স্কুল জীবন থেকে ভালোবেসে আসা লামিয়া ফুটে ওঠে নিজস্ব রঙে, নিজস্ব ভঙ্গিমায়।
তেত্রিশ পৃষ্ঠার শেষোক্ত প্যারা দ্বিতীয় লাইন থেকে শেষ শব্দ পর্যন্ত প্রতিটি শব্দ বাস্তবতার রূপের সাথে সাদৃশ্য হয়েছে, জীবনের অলিগলি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া অতীতগুলোকে শব্দের তুলিতে রঙিন আঁচড়ে ফুটিয়েছেন আসমান এর লেখক শিবলী ভাই।
বইটিকে বিভিন্ন পাঠকদ্বয় বিভিন্ন দিক থেকে পর্যালোচনা করেছেন, তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে এখানে কিছু বলবো না।
তবে, আসমান বইটিতে একজন মুসলমান যুবকের কৌতূহল, উদ্দীপনা, প্রশ্ন, বিবেক বোধ সহ একজন সাধারণ ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষিত ছেলের মনের মানসিক অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে।
বর্তমানে, আধুনিক সমাজে, তাবলীগ জামাআত এর অবর্ণনীয় কষ্টের ইতিহাসের ফলে বর্তমান জামানার মুসলমানরা দ্বীনের খাতিরে, ইসলামের খাতিরে, ইসলামকে জানতে, বুঝতে আগ্রহী হচ্ছে।
তাদের সেই যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে তাবলীগ জামআত কাজ করে যাচ্ছে এক জোট হয়ে, কালেমাওয়ালা মুসলমানকে সত্যিকার অর্থে কালেমধারী মুসলমান বানানোর মেহমত করে যাচ্ছে তাবলীগ জামআত।ইসলাম সম্পর্কে জানা, ইসলামকে শুধু অন্ধের মতো বিশ্বাস করা, ইসলামের বিধিবদ্ধ জ্ঞানগুলোকে মেলে ধরা সহ একজন সাধারণ শিক্ষিত যুবকের পথভ্রষ্ট দিলকে সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহমুখী করতে ইমাম এর ভূমিকা ছিলো অনন্য।
সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ – প্রবাদটি বহুল প্রচলিত হলেও বর্তমান জামানার অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পিতা-মাতা এদিকে বেখেয়ালি।
আসমান বইতে তেমনিভাবে উঠে আসা চরিত্র রুশো, লামিয়া, আনোয়ার, খালিদ, জনাথন সহ বিভিন্ন বিভিন্ন চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণ এতোটা মনোমুগ্ধকর আর শৈল্পিক ভঙ্গিমায় করার জন্য শিবলী ভাইকে আমি শুধুমাত্র একজন পাঠক হিসেবে কিংবা একজন মুসলমান হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে আমি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ানতানামো বে থেকে বিনা বিচারে বারো (১২) বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছে এক বাংলাদেশি, ওয়াশিংটন পোস্টের এই খবরে চমকে গেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এমন সন্ত্রাসীর দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না।
আমেরিকার আর্মির কার্গো প্লেন তাকে ফেলে দিয়ে গেছে আলবেনিয়ার তিরানা বিমান বন্দরে, ট্রাভেল ডকুমেন্টহীন দেশহীন মানুষটাকে পৃথিবীর কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় না। রিফিউজি নাম নিয়ে তাকে থাকতে হবে রেডক্রসের শেল্টারে?
মানুষটা এখন কোথায় যাবে!?চেনা সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, একটা অচনা দরজা খুলে যায়, জীবন বন্দি হয়ে গেলে সেটাও জীবনকেও ছাপিয়ে যায়, সেই জীবনের গল্প জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়…….
দ্য ফিকশন বেইসড অন ফ্যাক্ট, যে উপন্যাসের স্থান-কাল-ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো।
বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা থেকে আমার অনুযোগ (রেটিং) চার..চার দশমিক তিন….চার দশমিক পাঁচ…তিন দশমিক নয়…চার দশমিক পাঁচ…. করতে করতে সবশেষে চার দশমিক আট (৪.৮) এ এসে থেমে গেলো।
আর, চার দশমিক আট (৪.৮) আমি হাতের আঙুলে কড়াগোনা যায় এমন কয়েকটা বইকে দিয়েছি।
আসমান, যে বইয়ের প্রথমাংশ আমার জীবনের গল্প, যে গল্প আমার জীবনের গল্প, যে গল্প অন্ধকার হাতড়ে আলোতে ফিরে আসার গল্প….. সেই গল্প পড়া এবং নিজের অন্তরের অন্ধকার দূর করার জন্য প্রত্যেক সাহিত্যপ্রেমীদের, বইপ্রেমীদের এবং বিশেষত তরুণ-যুবক বয়সের প্রত্যেক মুসলমানকে এই বইটি পড়ার সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি…….
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩২
আসমান উপন্যাসটা পড়ার পর ভিতরের অনুভুতিটাও সত্যিকার অর্থে অসীম। মূলত প্রথমে পড়েই বুঝাটা কিছুটা মুশকিল এর গভীরতাটা। একজন মানুষ কিভাবে তার নিজস্ব সততা আর ঈমানের সাথে সবকিছু জয় করতে পারে তার এক অসাধারণ অনন্য সৃষ্টি এই উপন্যাসটি। আমার ধারণা নিজের অভিজ্ঞতা আর বিশ্বাস না থাকলে এত সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকরভাবে সম্পূর্ণ কাহিনী ফুটিয়ে তোলাটা বেশ কষ্টকর হয় যেটা লেখক অনেক সাবলীল আর সহজভাবে করেছেতো বটেই তার সাথে পাঠাকের হৃদয় স্পর্শও করেছে। পারপাস অফ লাইফ এর বিষয়টা যেমন সত্য তেমনি এই অসীম হৃদয়টা এক অসীম সত্তার, সেটাও সত্য আর সেটাকেই লেখক হৃদয় আল্লাহর ঘর এই উক্তিটি দ্বারা অভূতপূর্ব কৌশলে তুলে ধরেছেন। সুবহানাল্লাহ!! ইমাম এর বাস্তববাদী কিছু উক্তি শুধু ওমারকে না পাঠকেও মুগ্ধ করেছে এবং অদ্ভুত এক শিহরণ জাগিয়েছে, ছোট্ট করে তাই তুলে ধরলাম আমার ভালোলাগার সেই উক্তিটি – ইমান শুরু হয় অন্তর থেকে, পরে দেহের বাইরে ইসলাম রূপে সেটা প্রকাশ পায়। ইসালাম শুরু হয়ই বাইর থেকে পরে অন্তরে প্রবেশ করে সেটা পূর্ণতা পায়। তুমি দেখতে যেমনই হও না কেন, তোমার কর্মটাই ইসলাম।
সৃষ্টিকর্তার সাথে যেই সম্পর্ক সেটা দুনিয়ার সব সম্পর্ক থেকে ভিন্ন কারণ সবকিছু ছেড়ে চোলে গেলেও একমাত্র তিনিই থাকবেন পাশে সারাজীবন- আমি রাজ্য চাই না হে মহাপরাক্রমশালি সম্রাট, আমি তোমাকে চাই। আসমা যখন ওমারকে বলেছিল উড়ে উড়ে আপনি আর কতদূরে যাবেন, আপনি ওমার যদি পাখি হতে পারেন তবে আমি আসমা, আসমান হয়ে যাব। কোথায়ে যাবে, কতদূরে যাবে পাখি আসমান ছেড়ে! আমি সে পাখির জন্য আসমান হয়ে থাকব ; এই কথোপকথনকে এতোটা নানন্দিক আর রুচিসম্মতভাবে লেখক তুলে ধরেছেন যেটার শ্রুতিমধুর পরিণতি শেষ পর্যন্ত পাঠকের মনেও প্রশান্তির ছায়া এঁকে দেয়। আমার লেখা এই প্রথম প্রতিক্রিয়া ভাষায় প্রকাশ করলাম যদিও দারবিশ পরে লিখতে ছেয়েছিলাম কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলির প্রতিটি বইয়ের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র, কাহিনী, যুক্তি এক কথায়ে জীবন আদর্শ আমাকে প্রতিবার মুগ্ধ করে। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত দারুন ভাবে পাঠকের সামনে গল্প এবং উপন্যাস গুলোকে তুলে ধরার জন্য।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৩
(নামাজ শেষে ছোট বোন গাল ছুঁয়ে আদর করল। ব্যস্ত আমি প্রশ্ন চোখে তাকালে বলল, আপু তুমি অনেক ভালো একটা কাজ করেছো।
আমি আবার প্রশ্ন চোখে তাকালাম।
বললো, আসমান বইটার জন্য তোমাকে যত আদর আর দোয়া দেব কম। বইটা আনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ তোমার প্রতি।
সেই কৃতজ্ঞ ছোট্ট পৃথিবীর ওয়াল থেকে-)আসমান নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি বই। বইটি পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি। বইটিতে সবকিছু পেয়েছি।
ধর্ম, ইতিহাস, বিজ্ঞান, যুদ্ধ, প্রেম, বিরহ, টানটান উত্তেজনা, স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসা, সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এ সমস্তই অসাধারণ অতুলনীয় নিপুণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। ইসলাম যে কত সুন্দর একটি জীবন বিধান তা বইয়ের পাতায় পাতায় সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
একইসাথে বইটি তথ্যসমৃদ্ধ। এ থেকে অনেক অজানা তথ্য আমি জেনেছি।
বইটা পড়ার পর সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস আরো গভীর ভালোবাসার দৃঢ়তায় পরিণত হয়েছে।
আমি কে, আমার পৃথিবীতে আসার উদ্দেশ্য কী, তা জানতে পেরেছি।
আমি এরকম দ্বিতীয়টি পড়িনি। বইটা সবাই পড়তে পারবে কারণ,এতে সব বিষয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে। তাই যার যে বিষয়ই পছন্দ হোক না কেন বইটা সবার জন্য। বইটা পড়লে ওমারের মত আমাদের জীবনের গতিধারাও পাল্টে যাবে। আর এ পরিবর্তন অনেক সুন্দর।প্রিয়_উক্তি থেকে কিছু – হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরি করা হয়েছে এইজন্যে যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন।
-দীর্ঘ জীবন মানেই শোকের দীর্ঘ সফর।
-তোমার হাতে তেমার কোনো প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যেকোন সময় তা কেড়ে নেওয়া হবে, এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হলো যা পেয়েছো তার জন্য এত উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছো তার জন্য এত বিষাদের কিছু নেই।
-আত্মার মুক্তি হলো আসল স্বাধীনতা
-ইসলাম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়। এটা যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাস।
-যুক্তিপূর্ণ বিশ্বাসই হলো বিশ্বাসের আসল শক্তি। যে শক্তির অনেক প্রভাব।
-যে আল্লাহকে ভয় পায় না সে পৃথিবীর সবকিছুকেই ভয় পায়। আর যে আল্লাহকে ভয় পায় পৃথিবীর সবকিছু তাকে ভয় পায়।
-পৃথিবীতে সে তার নিজের ইচ্ছায় আসেনি, নিজের ইচ্ছাতেও তার যাওয়া হবে না। তাহলে মধ্যবর্তী এই সময়টুকুতে নিজের ইচ্ছা তৈরি করবে কেন?
-কঠিন কথাকে যে শিল্পী সহজভাবে বলতে পারে সেই সার্থক শিল্পী।লেখকের দখল ও দারবিশ মনে গেঁথে ছিলো। আজ যোগ হলো আসমান।
আমি আমার শব্দের সীমাবদ্ধতার কারণে বইটার যথাযথ প্রশংসা করতে পারিনি।আমি শুধু মন থেকে প্রার্থনা করি, এই বইটার অনেক অনেক কপি বিক্রি হোক। অধিক পরিমাণ পাঠক বইটা পড়ুক। কেউ যেন এই সুন্দর, চমৎকার বইটি পড়া থেকে বঞ্চিত না হয়। লেখকের কাছে অনুরোধ তিনি যেন এভাবেই আরো অনেক অনেক বই আমাদের উপহার দিতে পারেন।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৪
বইয়ের শুরুতেই শিরোনামে লেখা আসমান যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়। বইটির ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়েও বারবার এই শব্দটি মনে পড়ছে। আসলেই আসমান এর গল্পটি জীবনের চেয়েও বড়।
কাহিনী সংক্ষেপ:
গল্পটি এক বাংলাদেশী যুবকের। মনের অশান্তি আর অস্থিরতার ফলে সে খুঁজে ফিরছিল কোথায় পাওয়া যায় একপশলা প্রশান্তির বৃষ্টি। যেখানে গিয়ে ভুলে থাকা যাবে সকল অশান্তি, অপ্রাপ্তির দুঃখ। তাই বন্ধু রুশোর সাথে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই নেশার জগত, রুশোর জীম মরিসনকে অনুকরণে ওয়াইল্ড লাইফ কালচারে মন টানছিল না ওমার রিজওয়ানের। তার মা বলেছিল ইমামকে গিয়ে বলতে, আপনি আমাকে বন্ধু বানিয়ে নিন। ইমামের কথায় ওমার রিজওয়ান খুঁজে পায় জীবনের আসল অর্থ। এরপর ঘুরে যায় তার জীবনের মোড়। তার জীবনের গল্প হয়ে যায় জীবনের চেয়ে বড়। গল্পটি ধানমণ্ডি থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানের রাইবেন্ড, আফগানিস্তান,গুয়েন্তানামো বে, আলবেনিয়ার তিরানা হয়ে গিয়ে ঠেকেছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বারবাডোজে।
এর মাঝেই ওমারের জীবনে ঘটেছে নানা আখ্যান। ওমারের সাথে তার আসমান আসমার শুভ পরিণয় হওয়ার পরেও তাদের জীবনে অনুপ্রবেশ ঘটে বিচ্ছেদের। এক পর্যায়ে তাকে আটকে রাখা হয় কিউবার কুখ্যাত গুয়েন্তানামা বে কারাগারে। বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় বার বছর। ওয়াশিংটন টাইম যখন এ খবর প্রকাশ করে তখন বাংলাদেশ তাকে টেরোরিস্ট মনে করে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাহলে কোথায় যাবে এখন এই গৃহহীন মানুষটি। কেনইবা তাকে আটকে রাখা হল সেই গুয়েন্তানামা বে কারাগারে। যেখানে জায়গা হয় পৃথিবীর দাগী দাগী আসামীদের। ওমার আর আসমার কি আবার দেখা হয়েছিল? নাকি তাদের হৃদয়ের পবিত্র প্রেমের আসল পরিণয় হয় জান্নাতে? জানতে হলে পড়ে ফেলুন লতিফুল ইসলাম শিবলীর এ যাবতকালীন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আসমান – যে গল্প জীবনের চেয়ে বড়।চরিত্র বিশ্লেষণ:
গল্পের প্রধান চরিত্র ওমার রিজওয়ান। এক বাংলাদেশি যুবক। বিভিন্ন বিষয়ে তার রয়েছে পর্যাপ্ত জ্ঞান। অশান্তি ভুলে থাকতে তাকে নেশায় জড়াতে দেখা গেলেও তাকে কখনো বখাটে বা বাজে ছেলে বলা যায় না। তাই তো সে নেশা ছেড়ে খুঁজেছে যেখানে জীবনের প্রশান্তি তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। গল্পের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলা যায় ইমাম সাহেবকে। তার মাধ্যমেই গল্পে তুলে ধরা জীবনের বোধ, জীবনের প্রশান্তির ধর্মের প্রয়োজনীয়তা। এই চরিত্রের মাধ্যমে লেখক প্রকাশ করেছেন তার গভীর ধর্মীয় জ্ঞান। যা আমাকে রীতিমতো হতবাক করে দিয়েছে। গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম খালিদ। আর গল্পের নায়িকা চরিত্রের নাম আসমা। যাকে ওমার ডাকে আসমান। আমি তোমার একলা পাখি, তুমি আমার আসমান। তাদের মাঝে ভালবাসার বর্ণনা দীর্ঘ পরিসরের না হলেও অতটুকুই গেঁথে যাবে হৃদয়ের অন্দর মহলে। এছাড়া গল্পের আরো একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র ওমারের বন্ধু রুশো। উঠতি ব্যান্ড শিল্পী। হিপ্পোদের মতো মতাদর্শ আর জিম মরিসনের ওয়াইল্ড লাইফ কালচারে বিশ্বাসী। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রগুলো হচ্ছে ওমারের মা, আনোয়ার, জনাথন, শিমুজি। শিমুজি চরিত্রটি গল্পের অন্যতম এক টুইস্ট।
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
হৃদয় আল্লাহর ঘর। মানুষের হৃদয়টা তৈরী করা হয়েছে এইজন্য যে সেখানে শুধুমাত্র আল্লাহ থাকবেন। সে ঘরে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ঢুকলেই শুরু হবে তোমার জাগতিক অশান্তি।
উপন্যাসের শুরুতেই এমন একটি হৃদয়জুড়ানো বাক্য দেখে যারপরনাই চমকে গেছি। এরপর যত পড়েছি মুগ্ধতা ততই বেড়েছে। বারেবারে অবাক হয়েছি লেখকের জ্ঞানের গভীরতা দেখে। এতটা সমৃদ্ধ উপন্যাস এর আগে কখনো পড়িনি।
এই বইয়ের উল্লেখযোগ্য একটি দিক হচ্ছে প্রামাণ্য ইতিহাস বর্ণনা। বইটির প্লট বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের। তৎকালীন আফগানিস্তানের ইতিহাসে সকল গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং ব্যক্তিত্বের কথা উঠে এসেছে লেখকের লেখনীতে। এতে লেখক উপন্যাস লিখতে গিয়ে কী পরিমান স্টাডি আর পরিশ্রম করেছেন তা বুঝা যায়। লেখক খুব বিচক্ষণভাবে উল্লেখ করেছেন তাবলীগের সূচনার ইতিহাস। যা দেখে আমার হতভম্ব হওয়ায় সীমা ছিল না। এ ছাড়া লেখক উপন্যাসের অনেক জায়গায় কুরআনের আয়াত উল্লেখ করেছেন, সুরা ও আয়াত নাম্বার সহ। যাতে মুগ্ধতা ক্রমে ক্রমেই বেড়েছে। যতই এগিয়েছি লেখকের জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হতে বাধ্য হয়েছি।
বইটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এর ভিতরকার মেসেজ বা বার্তাগুলো। জীবনসমুদ্র থেকে সেচে আনা মুক্তাতুল্য বার্তাগুলো যে কোনো পাঠকেরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। আমাদের বোধের দুয়ারে কড়া নেড়ে যাবে বারবার। এই বার্তাগুলোই উদ্ভাসিত করে তুলবে ধর্মীয় জীবনের মাহাত্ব।
কিছু মেসেজ উল্লেখ করে দিচ্ছি, যেমনঃ দুনিয়া বিচ্ছেদের জায়গা, মিলনের জায়গা জান্নাত।
সত্য বিশ্বাসের বানী আসে হৃদয় থেকে। সত্য যখন কথা বলে তখন মুখ বা স্বরতন্ত্র কথা বলে না। মূলত কথা বলে তার হৃদয়, সেটা অন্য হৃদয়কে স্পর্শ করে।
মুসলিমদের মেরুদণ্ড সেদিন থেকেই ভাঙা শুরু হয়েছে যখন তারা দ্বীনি বন্ধন বা উম্মাহ থেকে ভৌগোলিক জাতিয়তাবাদী পরিচয়ে পরিচিত হতে শুরু করেছিল।
গল্পের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে আফগানিস্তান। লেখক আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল, পাহাড়ী উপত্যাকা, নদী, নালার যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে আমি নিজেই যেন চষে বেড়াচ্ছি সেখানে। এই বইয়ে আপনি যেমন বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনার নাম পাবেন তেমনি পাবেন আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত মালার সাংলাক রেঞ্জে জন্ম নেয়া কাবুল নদী, হেলমান্দ, হারি, আরগান্দাব, কুনার, পাঞ্চ, মুরঘাব, গোমাল, ফারাহ, ককচা, পাঞ্চশির, ওয়াখান, পিচ, আলিনাগার,খুররাম, মুসা কালা এবং আমু দরিয়ার। এগুলোর নাম পড়ে লেখকের ডেডিকেশনের মাত্রাটা ভালোভাবেই উপলদ্ধি করা যায়।
লেখকের বর্ণনা ভঙ্গির কথা আর কী বলব? শান্ত নদীর স্থির স্রোতের মত বহমান তার গদ্যভঙ্গি। কিছু লেখার ভঙ্গি এমন থাকে যা পাঠককে ক্রমে ক্রমে গভীরে তলিয়ে নিয়ে যায়। তার লেখার ভঙ্গিমা এমনই। পাঠককে এক মুগ্ধকর আবেশে জড়িয়ে নিবে গল্পের গভীরে থেকে আরো গভীরে।
মোটকথা, বইটিতে মুগ্ধ করার মত প্রচুর এলিমেন্ট পাবেন। একজন পাঠকের জন্য আর কী চাই!
মন্দ লাগাঃ আমি কখনোই বইয়ের রিভিউতে প্রচ্ছদের আলোচনা করি না। এটাকে প্রাসঙ্গিকও মনে করি না। তবে এই বইয়ের ক্ষেত্রে বলতে হচ্ছে, বইয়ের ভেতরের কনসেপ্টের সাথে প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বইয়ের ভেতরকার মেসেজগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে প্রচ্ছদটা কোনোভাবেই মানানসই হয় না। এটা বেশ খারাপ লেগেছে। জানিনা লেখক কী মনে করে এই প্রচ্ছদটাকে রেখেছেন। আর বেশ কিছু বানান ভুল ছিল। একজায়গায় বাক্যের গঠনে একটু উলটপালট পাওয়া গেছে। জায়গাটা দাগিয়ে না রাখার কারণে ভুলে গেছি।
আর বইয়ের মধ্যে “মোজাহেদ্বীন” শব্দটা এভাবে লেখা হয়েছে। যা ভুল । এতে দএর নিচে সংযুক্ত “ব” হবে না।
“জাতিয়তাবাদ” লেখা হয়েছে ত এর উপরে হ্রস্ব ই কার দিয়ে। হয়ত নতুন প্রমিত বাংলা বানানরীতি মেনে।তবে শেষে এসে একটি মোটা দাগের কথা বলতে চাই। তা হল, এই বইটি শুধু পড়লেই হবে না, হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করতে হবে। তাহলেই এই বইটির যথার্থ হক্ব আদায় করা হবে। আসমানকে শুধু একবার নয়, দৈনিক একবার করে পড়তে পারলে মন্দ হয় না।
আরেকটি কথা না বলে পারছি না বইটি পড়ার সময় বারবার মনে হয়েছে যদি লেখককে একবার জড়িয়ে ধরতে পারতাম। এমন একটি অনবদ্য সৃষ্টির জন্য মুগ্ধ পাঠকের এমন ভালোবাসা তিনি পেতেই পারেন। অথবা পাঠক তার কাছে এটুকু ভালোবাসার ক্ষণ দাবি করতেই পারে।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৫
বইটি পড়ার পর থেকে আমি নামাজ পড়তে শুরু করলাম। ইনশাল্লাহ নিয়মিত নামাজ পড়বো। দোয়া করবেন স্যার।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৬
দারবিশ, দখল পড়ার পর এবার আসমান পড়ে আগের মতই মুগ্ধ হলাম! তিনটা বই এ তিন রকম ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। কেন জানি লতিফুল ইসলাম শিবলীর উপন্যাস পড়ার পর তার রেশ বহুদিন থেকে যায়। আসমানের ক্ষেত্রে তাই হল। বারবার পড়েছি। আসমান এমন একটা বিষয় নিয়ে লেখা হবে তা ভাবতে পারছিলাম না। উপন্যাসটা একেবারেই নতুন আর বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক। আজকাল এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে কত জন বিভিন্নভাবে ভুল পথে মোটিভেটেড হয়েছে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার জন্য। আসমান এমন একটা বই যেখানে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। বইটা পড়লে বোঝা যায় লেখক এই বিষয়ে অনেক স্টাডি করেছেন তাই অনেক জানেন। ইসলামের আয়াত গুলো ব্যাখ্যা করার সময় কোড দিয়ে লিখেছেন এই ব্যাপারটা আমার কাছে বিশেষভাবে ভালো লেগেছে। এতে ভুল বোঝাবুঝি অবকাশ থাকে না। এক কথায় বলা যায় চমৎকার এবং অসাধারণ একটা উপন্যাস আসমান। ভবিষ্যতে এমন আরও তথ্যভিত্তিক-হৃদয় ছোঁয়া উপন্যাস লেখকের কাছে আশা করছি। শুভকামনা।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৭
Unpublished
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৮
১৯৯৪ সালের পর ২০১৮ তে গিয়েছিলাম বইমেলায় প্রিয় বন্ধু শিবলীর লেখা দারবিশ আর দখল কিনতে, অনেক ব্যাস্ততার মাঝেও সময় পেলে বই পড়া হয়, শিবলীকে চিনি ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় গানের রচয়িতা সে, গান লিখেই সে হাজারো মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে সেই নব্বই দশকেই, দারবিশ, দখল বই দুইটা পরে বন্ধুর জন্য প্রান খুলে দোয়া করেছিলাম, এবারের বইমেলা থেকে আমার ছেলেমেয়েরা আসমান বইটা আনলো অনেকটা সময় নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়েছি,অনেক সময় ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি ঝরেছে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে পড়া শুরু করেছি জেনেছি অজানা অনেক কথা। যদি জানতাম আসমান এতো সুন্দর করে লিখেছ তুমি তাহলে তোমার জন্য চকলেট না দিয়ে জায়নামাজ পাঠাতাম আমি, সত্যিই লেখক কলমের জোরে অনেক ছেলেমেয়েদের কে জায়নামাজে বসাতে পেরেছে, আল্লাহ কিছু কিছু ভালো মানুষকে দিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষকে আলোর পথা দেখান, উপন্যাস বলতে যা জানতাম বা বুঝতাম আসমান পড়ে মনে হলো এতোদিনে মনের মতো একটা বই পড়ার সুজোগ হয়েছে আমাদের যে বই শুধু বই না একটা পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার গল্প, একটু কষ্ট পেলেই আমরা হতাশ হয়ে যাই খুব দ্রুত, ইমামের বক্তব্যের ভিতরে লেখকের কলমের লেখনী শক্তি যেন আমাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, ধর্মীয় দিকগুলো সুন্দর লেগেছে। কতটা সহজেই কঠিন কঠিন বিষয়গুলিকে কতো সহজে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া আছে, জীবন অনেক সুন্দর সহজ, আমরা না বুঝেই কঠিন করে ফেলি শুধু, আসমান পরিচ্ছন্ন একটা গল্প সবারই পড়া উচিৎ বইটা।
অনেক অনেক দোয়া শিবলীর জন্য,
আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন, আমিন।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩৯
গতবছর নিয়মিত নালন্দায় যাবার সুবাদে শিবলীর সাথে আমার পরিচয়। প্রিয় গানের এই গীতিকার, লেখক মানুষটির সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লেগেছিলো। তখন পড়েছিলাম দারবিশ, দখল। খুব ভালো লেগেছিলো লেখনী আর লেখক। কাছের মানুষ সবার বই কিনেছি আমি।
রিক্সায় আসতে আসতে কেন যেন বইটি বের করে দেখছিলাম, একটা পেজে একটা লাইনে আমার চোখ আটকে যায়, ওমার তার কষ্টগুলো নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেনা, রুশো সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনা। ফেন্সিডিলের নেশা দুজনের মধ্যে দুই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। মাত্রাতিরিক্ত কোডিন ফসফেট রুশোকে করে হাইপার আর ওমারকে করে সাইলেন্ট। ওমার এর চরিত্র সাইলেন্ট এটা আমাকে প্রভাবিত করে বইটি প্রথমে পড়ার জন্য।
বাসায় এসে ২২ পাতা পড়ি। কাল সকালে অফিসে নিয়ে যাই, বাসে পড়ি…. বুকের ভেতরে কেমন চিন চিন করছিলো। অফিসে কাজের ফাকে বইটি পড়তে লাগলাম। বুকের ভেতরে মুচড়ে মুচড়ে ব্যথা অনুভব করছি, চোখ জলে ভাসছে।
অফিস শেষ হয় কিন্তু ১৭ পাতা বাকি, আর শেষ করতেই হবে তাই চলে গেছিলাম পাবলিক লাইব্রেরিতে। চোখের জলে বইটি শেষ করি, চমৎকার মিলন।তোমার হাতে তোমার কোন প্রিয় জিনিসই নিরাপদ নয়। যে কোন সময়ে সেটা কেড়ে নেয়া হবে, এমনকি তোমার প্রিয় জীবনটাও। তাই শিক্ষা হলো, যা পেয়েছো তার জন্য উল্লাসের কিছু নেই, যা হারিয়েছো তার জন্য এত বিষাদেরও কিছু নেই। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো আমার। হঠাৎ করেই আমার ডিভোর্স হয়েছিলো। ওমার হারিয়েছিলো লামিয়াকে আর আমি ১৫ বছরের সংসার। আমি এতোটাই ট্রমায় চলে গেছিলাম আল্লাহর সাথে রাগে, অভিমানে আমি নামাজে অনিয়মিত হয়ে যাই। কিছুতেই আমি আল্লাহর সাথে সেই প্রেমের সান্নিধ্যে যেতে পারছিলাম না।
আমি খাবার দিয়ে কুকুরটার জীবন বাঁচালাম না, বরং খাবার খেয়ে কুকুরটাই যেন আমায় বাঁচাল। আমার মনে হলো, আমাকেও ওই লোকটি মুক্তি দিয়েছে চলে যেয়ে।
সেই অসীম বস্তুর নাম হৃদয়। এই জন্য বলা হয় অন্তরের চাহিদা অসীম। এই অসীম অন্তর বা হৃদয় সৃস্টি করা হয়েছে এক অসীম সত্ত্বার জন্য, সেই অসীম সত্তার নাম- আল্লাহ। আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। আমি আল্লাহর ইবাদতে দীর্ঘ ১৫ বছর অনেক নফল ইবাদতে মশগুল থেকেছি। কিন্তু আমি ট্র্যাক থেকে সরে গেছিলাম…. আল্লাহর কাছে আবার যাওয়ার তীব্র ইচ্ছে জাগলো।
দোয়া কবুলের স্পর্শ … আমিও অনুভব করতাম।
ইমান শুরু হয় অন্তর থেকে,পরে দেহের বাইরে ইসলাম রূপে প্রকাশ পায়। ইসলাম শুরু হয় বাহির থেকে পরে অন্তরে প্রবেশ করে সেটা পূর্নতা পায়। তুমি দেখতে যেমন হও না কেন,তোমার কর্মটাই ইসলাম।
আমি এখন কোন অবস্থানে আছি! ভেবে আমি কান্না থামাতেই পারছিলাম না।
কোথায় যাবে, কতদূরে যাবে পাখি আসমান ছেড়ে! আমি সে পাখির জন্য আসমান হয়ে থাকবো।
প্রেমের এই বোধ ব্যাকুল করেছে আমায়….
ওমার একাকিত্ব এই নির্জনতা এখন এঞ্জয় করে। যত নির্জনতা ধ্যান ততো গভীর। গভীর রাতের তাহাজ্জুদ, জিকির আমাকে আল্লাহর কতো সান্নিধ্যে নিয়ে যেতো তা অনুভব করে হৃদয় চিড়ে যাচ্ছিলো আমার।
এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি ফারসি ভুলে যাব। সত্যি একাই হেসেছিলাম অদ্ভুত অনুভবে।
আমার জীবনেও আলাদা করে কোন জান্নাত নেই, আমি আপনি যেখানে মিলবো সেটাই জান্নাত। আমারো তাই মনে হয়, বিশ্বাস করি।
আমি জানিনা, তুমি জানো, তুমি জানো আমার কি প্রয়োজন। আমার বেদনা তোমাকে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই, তাই তোমার শিখিয়ে দেয়া ভাষায় তোমাকে বলি, আমার জীবন আমার মৃত্যু, ওগো বিশ্বের প্রতিপালক শুধু তোমার জন্য। তুমি আমাকে গ্রহণ করো, আর আমার মন কে প্রশান্ত কর। মাবুদগো, তুমি আমার হয়ে যাও, আর আমাকে তোমার করে নাও। আমার আকাঙ্খা আমার অন্তরকে অশান্ত করে দিয়েছে, আমাকে ক্ষমা কর, আমার অন্তরকে প্রশান্ত করে দাও, তুমি শান্তি তুমি শান্তি তুমি শান্তি…….আমিও এখন ঠিক এই অবস্থানে বিরাজমান।
ওমার আর আসমানের মতো হয়তো কখনো সেই শুভ ক্ষণ আসবে না কিন্তু আবার আমি জায়নামাজে আল্লাহর কাছে কাঁদবো, প্রিয় আমার সেই কোরান বুকে জড়িয়ে রাখবো। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়া বড়ই প্রয়োজন।
গল্পের চরিত্রে এতো সুন্দর মোটিভেট করার লেখনী সত্যি অবাক করার। কাউকে, নামাজ পড় নামাজ পড় বললেই, মসজিদে যাওয়া হয়ে উঠেনা। কিন্তু এই রকম চরিত্র এই রকম ব্যাখ্যা খুব সহজে হৃদয় ছু্ঁতে পারে, বিবেক কে জাগাতে পারে…. অনায়াসে, এ আমার বিশ্বাস।
লিখাটি বড় হয়ে গেলো,ছোট করতে পারলাম না। দুঃখিত তাই।তোমার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪০
আসমানের রিভিউ তালিকায় হতে পারে আমিই সর্বশেষ ব্যক্তি। দুর্ভাগ্যবশত সময়ের অভাবে বইটি পড়ে শেষ করতে আমার ঢের বিলম্ব হলো। হৃদয়বিলাসী সম্মানীয় সকল পাঠকদের মত বইটি আমাকেও পরম হৃদগত ভাবে হৃদয়ভেদ করেছে। মোট কথা বইটি আজকের এমন যুগে একটি পুস্তকস্থ ইসলামী আদর্শস্থানীয় মজবুদ বিশ্লেষণ যেটাতে উচ্চ আদর্শ ও নীতি দিয়ে জীবন নিয়ন্ত্রণের মতবাদ একেবারে সর্বস্ব কলকব্জা একেকটাকে ভেঙ্গেচুরে তুলে ধরা হয়েছে। আমার কেন জানি মনে হয় এই বইটি পৃথিবীর যেখানেই একবার পড়া হবে সেদিন থেকে সেখানে মানুষ, ধর্ম, জিহাদ, জাতি, খোদা, প্রেম, ভালবাসা অন্তত এই বিষয়গুলো নিয়ে অবশিষ্ট সংশয়ের অবসান ঘটবে। সুযোগ পেলেই এখন থেকে আমি এই বইটিকে ধর্মান্ধ সংশয়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগাবো। আসমান সফল হউক, অন্তত আসমানের কারনে বাংলাদেশ নতুন করে বদলে যাক, এই কামনায়।