No Justice No Peace
উপন্যাস
লেখক: লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৩
নব্বই দশক থেকে আজ অবধি মানুষের মুখে মুখে ফেরা অসংখ্য জনপ্রিয় গান ও কবিতার কবি লতিফুল ইসলাম শিবলী’র চতুর্থ কাব্যগ্রন্থে এসে তার কবিতার এক বিস্ময়কর পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তিনি আকণ্ঠ ডুবে আছেন প্রেমে, এই প্রেম জাগতিক নয়- আধ্যাত্মিক। সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবেসে তার পুরো সৃষ্টি জগতের প্রতি তার প্রেম। সে প্রেম এমনই বেপরোয়া যে তিনি অবলীলায় বলতে পারেন – একটা জীবন দিয়েও যদি তোমায় আমি পেলাম, তবে বড় অল্প দামেই পেলাম। তাত্ত্বিক-গভীর অনুভূতিগুলি অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় তিনি প্রকাশ করেছেন কবিতায়। সেসব কবিতা তাকে নিয়ে গেছে গণমানুষের কাছে। ফিলিস্তিনের হুইলচেয়ারে বসা সেই মহান শহিদ যোদ্ধা ‘ফাদি আবু সালাহ’ কে শিবলী’র কবিতার ভিতর দিয়ে এদেশের মানুষ স্মরণীয় করে রেখেছে। মধ্যযুগের মধ্য এশিয়ান সুফিদের মরমিবাদের খুশবু মেলে তার কবিতায়- ‘যুগোপযোগী হওয়া বন্ধু আমার কর্ম নয়, যুগ কে বানাবো আমার উপযোগী জেনে রেখো নিশ্চয়।’ তার কবিতায় অধ্যাত্ববাদ রূপান্তরিত হয়েছে- দ্রোহে। আল্লাহর প্রেমে সারা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি দিয়েছেন ‘মানুষ’ এর নতুন সংজ্ঞা- ‘যতক্ষণ তুমি ইনসাফের পক্ষে শুধু ততক্ষণই তুমি মানুষ’
পাঠক প্রতিক্রিয়া
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১
নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে—এমন খবর শোনার পরই রেকমেন্ড করার মতো আস্থা, বিশ্বাস কিংবা প্রত্যাশা যেসব লেখক পাঠকের মনে শক্ত ভীত তৈরি করতে পেরেছে তাদের মধ্যে লতিফুল ইসলাম শিবলী বোধহয় অন্যতম।
read more...
নব্বই দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে গীতিকবি হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত হলেও আমাদের কাছে তিনি ঔপনিবেশিক হিসেবে বেশি পরিচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে উনাকে চিনেছি উনার লেখা উপন্যাস পড়ার মধ্যদিয়ে। দারবিশ, দখল, আসমান, রাখাল, নূরের মতো মতো শ্রেষ্ঠ কাজগুলো পড়ার পর থেকেই উনার বইয়ের প্রতি একটা প্রবল টান তৈরি হয়েছে। আপনারা যাঁরা আমার লেখা বই রিভিউ/লেখালেখি নিয়মিত পড়েন বা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে চেনেন, তারা নিশ্চয়ই ব্যাপারটা টের পান যে আমি কতটা প্রভাবিত উনার মন্ত্রমুগ্ধ লেখার দ্বারা! সে আকাঙ্খা থেকেই গতকাল প্রকাশিত উনার লেখা কবিতার বই ‘যতক্ষণ তুমি ইনসাফের পক্ষে’ পড়তে শুরু করলাম।
প্রায় সত্তুরটি কবিতা নিয়ে এ বই। মলাটাবদ্ধ পঙতিগুলোতে তিনি উপস্থাপনশৈলীর পাশাপাশি বিষয়বস্তুকে অত্যাধিক প্রাধান্য দিয়েছেন। আবেগের তীব্রতায় পাঠকের ফুসফুস থেকে বেদনার্ত দীর্ঘশ্বাস বের করে আনতে চেয়েছেন, কখনো চেয়েছেন
ঘটনার ঘনঘটায় পাঠককে আচ্ছন্ন করে কল্পনার জগৎ নিয়ে তাকে ভাবাতে! আবার মাঝে মাঝে মুখোশ পড়াদের বিরুদ্ধে ফুটে ওঠেছে কবির তীব্র দ্রোহ। ইনসাফের পক্ষে বিপ্লবীদের জুগিয়েছে প্রেরণা।
শব্দ চয়ন, স্তবক বিন্যাস ও মেদ ছিলো অমরত্বের স্বাদ নেওয়ার মত। কবি জীবন ঘনিষ্ঠ দর্শনের ভেতর দিয়ে যেতে চেয়েছেন তৃষ্ণার্ত পাঠকের হৃদয়ে। কবি যখন কলমের কালিতে লিখছেন— ফাদি আবু সালাহ
তোমাকে দেখার আগে
জানা ছিল না—
মানুষের পা কেড়ে নিলে
তার পিঠে গজায় ডানা,
আর হাঁটতে বাধা দিলে মানুষ শিখে যায় উড়তে।
এরপর ওরা কেড়ে নিয়েছে তোমার শৈশব—
অথচ তুমি কখনো শিশু ছিলে না
তুমি ছিলে জান্নাতের সবুজ আবাবিল।
এই কয়েকটা লাইন পড়তে গিয়ে আমি থামকে গেলাম। চোখের নোনাজলে আবছা হয়ে আসা দৃষ্টিতে আমার কল্পনায় যেন সে দৃশ্যটি ভেসে উঠল, ফিলি/স্তানের শহীদ ফাদি আবু সালাহ হুইল চেয়ারে বসে তীর দিয়ে কংকর ছুড়ছেন দখলদার ই /স রা য়ে লী জায়েন্টের দিকে। আহ্ সে কী দৃশ্য। কবি কত সুন্দরকরে মায়াভরে তুলে এনেছেন তার কবিতার ভাষায়।
রোম্যান্টিকতা খুব বেশি না থাকলেও কিছু কবিতায় ছিলো ভালোবাসার কথা। তাই কবি লিখেছেন—
যখন আমি ঘরে থাকি
বুকে তুলে রাখি
যখন আমি বাইরে থাকি
মাথায় তুলে রাখি।
এছাড়া আর রাখব কোথায়?
হয় না সংকুলান
আমি তোমার একলা পাখি
তুমি আসমান।
কখনো কখনো কবি অকপটে স্বীকার করেছেন তার সামর্থ্যহীনতার কথা। জয়গান গেয়েছেন মানবতার।
মুখোশ পড়া বর্ণচোরদের বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহের জানান দিয়েছেন একাধিক পঙক্তিতে। সত্য-মিথ্যের সংঘাত কিংবা জালিম-মজলুমের লড়াইয়ে নিরবদের কবি চিহ্নিত করেছেন জালিমের সহযোগী হিসেবে।
কবি লিখেছেন—
সত্য মিথ্যের
যখন
অনিবার্য সংঘাত,
তখন
নীরবতা অপরাধ।
ন্যায়ের পক্ষে পথিকদের সাহস জুগিয়েছেন কবি। প্রেরণা দিয়েছেন ইনসাফের পথে। তাই তো লিখেছেন,
কণ্ঠে তোল বজ্রধ্বনি
কলম কর তীক্ষ্ণ ধার
শাহদাতের পথ দেখাল—
আবরার আবরা।
আল্লাহ তায়া’লার প্রেম-প্রার্থনা কামনা করতেও ভুলেননি কবি। একাধিক কবিতায় গেয়েছেন মহান রবের গুণগান। কামনা করেছেন তার সাহায্য এবং দয়া-মায়ার।
কিছু কবিতায় লক্ষ করা গেছে সময়ের কাছে কবির অসহায়ত্ব। তবে তিনি আপোষ করেননি তার সীমাবদ্ধতা নিঃসংকোচে বলতে, কিংবা তার সংকল্পের কথা জানান দিতে। তাই কবি বঙ্গবন্ধু কবিতায় লিখেছেন—
আপনাকে নিয়ে আমার কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করে—ফ্যাসিবাদ শেষ হলে পর
আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখব।
এখন লিখলে,
কেউ বলবে—তেল
কেউ দেবে—জেল
অফুরান্ত প্রাণ শক্তির বুলিয়ান প্রতিটি কবিতা। প্রায় শখানেক পৃষ্ঠার মলাটবন্দী এ বই নিয়ে একবাক্যে বলব- কবি এক পশলা জীবনকে বিমুক্ত করেছেন পাঠকের সামনে। যেখানে ফুটে ওঠেছে আধ্যাত্নীকতা, প্রেম-ভালোবাসা, মানবতার জয়গান ও ইনসাফের পক্ষে বিপ্লবীদের আওয়াজ।
একজন প্রাবন্ধিক বা গল্পকার যে গল্প পাঠকের সামনে হাজির করতে হাজার শব্দ লিখতে হয়, সে গল্প মাত্র কয়েকটি বাক্য দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন একজন কবি। এ জায়গায় বোধহয় কবিরা অন্যদের থেকে এগিয়ে। উপন্যাসিক হিসেবে লতিফুল ইসলাম শিবলীকে যেভাবে পাঠ করে মুগ্ধ হয়েছি অতীতে, কবি হিসেবে তাকে পাঠ করে কোনো অংশে নিরাশ হয়নি; বরং মুগ্ধ হয়েছি আরও বহুগুণ।
ন্যায়-অন্যায় এ সংঘাতের সময় আপনাকে প্রেরণা জুগাবে ‘যতক্ষণ তুমি ইনসাফের পক্ষে’।read less