পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১১
এবারের বইমেলায় একটি আলোচিত ফিকশনাল উপন্যাস হচ্ছে ফ্রন্টলাইন।লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী তার নিজস্ব ধারা বজায় রেখে এবারও নালন্দায় প্রকাশ করেছেন ফ্রন্টলাইন।সহজ ও প্রাঞ্জল গদ্যকার হিসাবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। গীতি কবি হওয়ার সুবাদে তিনি স্বল্প কথায় অধিক ভাব প্রকাশ করতে পারেন। আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও ধর্ম সম্পর্কে তার আগ্রহ লেখাকে সমৃদ্ধ করেছে। আসমানের ইমাম সাহেবের পর ফ্রন্টলাইলের ইমাম সাহেবেকে পাঠক মনে রাখবে জাতিগত দায়িত্ব পালনের জন্য।
read more...
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা, হতাশা, প্রতিবাদের ও প্রতিরোধের গল্প ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে।গল্পের ছলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিগত ৬০০ বছরের ইতিহাস তুলে ধরেছেন স্বল্প পরিসরে।একসময়ের সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী কিভাবে নেতৃত্বের অভাবে পিছিয়ে পড়েছে তা উঠে এসেছে এখানে।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩২ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস করছে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কুতুপালংয়ের ১০ নম্বর ক্যাম্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই গল্পের বিস্তার ও পরিনতি। ইমাম সামিউল হাসান যিনি রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট,পরিবার হারিয়ে এখন ক্যাম্পের আধ্যাত্নিক গুরু।কমান্ডার নাসিরউদ্দিনের সাহসিকতা আর প্রতিশোধস্পৃহা পাঠককে আগ্রহী করে তুলবে পরবর্তী অনুঘটনা জানতে।
নশু বাহিনী বনাম তোতা বাহিনীর অত্যাচারে ক্যাম্পের জীবনযাপন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে,স্থানীয় মাঝিরাই তাদের যোগসূত্র ।ইয়ারা ব্যবসা,চাঁদাবাজি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারই যাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।ক্যাম্পের বাসিন্দা ছাড়াও বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থা আতঙ্কিত যে দেশের অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। মেজর শারাফাত ক্যাম্পেই থাকছেন, যাতে তাদেরকে সংগঠিত করে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই প্রতিহত করা যায়।প্রাথমিকভাবে সফল হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপে তাদেরকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত
যে মডেলে আমাদেরকে সহায়তা করে, সেটিকে মানদণ্ড ধরে তাদেরকে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়। নৈতিক,আত্মিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হয় যাতে তারা আঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, দরকষাকষির টেবিলে বার্মিজ সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। উপন্যাসটি শেষ করলে আপনি নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর পেয়ে যাবেন।
আমাদের সরকার কি পারবে চীন ও ভারতের বিদেশনীতির পরিবর্তন ঘটাতে?
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কি আদৌ তাদের মাতৃভূমি আরাকানে ফিরতে পারবে??
রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাদের উদ্দেশ্য পূরণের সফল হবে?
আমার পছন্দের উক্তি “সে অবশ্যই নেতা নয় যে নেতা হতে হতে চায়।নেতা এমন এক ভারী দায়িত্ব, যার ওজন সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে কেউই নেতা হতে চাইবে না।নেতা হতে চাওয়া মানুষ সেই শিশুর মতো, যে জ্বলন্ত কয়লাকে খাবার মনে করে মুখে পুরতে চায়।নেতা হওয়ার প্রথম অযোগ্যতাই হচ্ছে নেতা হতে চাওয়া। পৃথিবীর নেতৃত্ব আজ নেতা হতে চাওয়া মানুষদের হাতে।তেমন মানুষেরা নেতৃত্বে থাকলে কী হয় তার প্রমাণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে।”
এখন বলি,কারা উপন্যাসটি পড়বেন।যারা ফিকশন ও থ্রিলার পড়তে পছন্দ করেন তারা সকলেই পড়তে পারেন।নবম-দশম,একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে যারা পড়ছে তাদের জন্য এটি বইমেলায় সেরা একটি অপশন হতে পারে ।
লেখকের প্রতি অনুরোধ থাকবে তার ভাষাবিন্যাস যেন আরো বিস্তৃত হয়।তার লেখা যেন শুধু তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট না করে পরিণত পাঠকদেরও কাছে টানতে পারে,এদিকে লক্ষ্য রাখবেন।সাধারণ ঘটনার অন্তর্নিহিত বিশ্লেষণের সহজাত প্রতিভাকে তিনি পাঠকের হাতে তুলে দিবেন,সত্য উন্মোচন করবেন,কলমের মাধ্যমেই প্রতিবাদ করবেন।বুয়েটের আবরারকে উৎসর্গ করার বইটির নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী হয়েছে।সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে আমাদের যে চিন্তার স্বাধীনতা দেওয়া আছে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন-এই প্রত্যাশা করছি।
সকলকে ধন্যবাদread less