দানব দেখতে চোখ লাগে, মানুষ দেখতে লাগে অন্তর।
উপন্যাস
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এক কুৎসিত চেহারার মানুষকে এক বিদুষী নারী বলেছিল- ‘আপনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ।’ এই একটি বাক্যেই বদলে গেছে তার জীবন। সে ছিল এমন পুরুষ যার সৌন্দর্য দেখার জন্য থাকতে হয় অন্তরের চোখ। একমাত্র সে নারীরই ছিল সেই চোখ। তারপর, জমিদারের বিলাসী জীবন থেকে সে লোকটি নেমে এসেছিল সাধারণ মানুষের কাতারে। ভালোবাসা তাকে দিয়েছিল বিদ্রোহের শক্তি। এটা সেই সময়ের ঘটনা—
যখন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হয়েছেন, আর সুবে বাংলা ও বিহার দখল করে নিয়েছে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাসে এই অংশটুকু লেখা হয় অনেক বড় করে। কিন্তু যে অংশটার কথা সবাই বিস্মৃত সেটা হল- পলাশী পরবর্তী তিন দশক নবাবের চাকরীচ্যুত সৈন্য, সাধারণ কৃষক, মুসলিম সাধক ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে সংগঠিত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এক মহান সুফি সাধক, তাঁর নাম ফকির মজনু শাহ্। শেষ যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন, কিন্তু উত্তরপুরুষের জন্য রেখে গেছেন ইনসাফের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক অভূতপূর্ব সাহসের উদাহরণ।
পাঠক প্রতিক্রিয়া
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১
ভাইয়া, অনেক অনেক দিন পর মনে হলো এমন একটা কিছু পড়লাম, যা সত্যিই ওর্থ রিডিং ছিল!
read more...
গল্প, সাহিত্য, দর্শন তিনের চমৎকার একটা মিশেল। রাজনৈতিক যে দিকগুলো এসেছে, সেটা ১৮ শতকের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও এসময়ের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারুনভাবে সমসাময়িক।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ২
একজন জাত লেখকের সবচেয়ে বড়ো শক্তি হলো পাঠককে তাঁর গল্পের সাথে মিশাতে পারা। পাঠক তাঁর গল্পের চরিত্রে কখনো হাসবে কখনো কাঁদবে।
read more...
বর্তমান সময়ে যে কয়জন লেখক সে জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে, নিঃসন্দেহে আমার চোখে শিবলী ভাই তাদের মধ্যে একজন।
উনার সাথে আমার পরিচয় আসমান উপন্যাসের মাধ্যমে। আসমান পড়ে শুধু মুগ্ধ-ই হইনি, ভাবতে হইছে প্রেম-ভালোবাসা, ধর্ম, পুঁজিবাদ, আধ্যাত্নিকা আর ইতিহাস আশ্রিত করে এমন শক্তিশালী গল্প পূর্বে কেউ লিখতে পেরেছে কীনা! আমি নির্ঘাত বলতে পারি, যারা আসমান উপন্যাস পড়েছেন তারা প্রত্যকে আমার সাথে একমত হবেন যে, কবি-গীতিকার পরিচয় বাদ দিয়ে লতিফুল ইসলাম শিবলীকে একজন ‘সৃষ্টিশীল শক্তিশালী’ লেখক বলে সম্বোধন করার জন্য আসমান উপন্যাসটাই যথেষ্ট। হাজার হাজার তরুণ জীবন বদলে দিয়েছে এই বই; পূর্বে অন্যকোনো বই তরুণদের মাঝে এতোটা প্রভাব রাখতে পেরেছে কীনা আমার জানা নেই।
উনার লেখার আলাদা একটা ধরণ আছে, কথা বলার আছে স্বতন্ত্র স্টাইল; যা পাঠককে মুগ্ধ করে, আটকিয়ে রাখে এক বসায় শেষ পর্যন্ত শেষ করে উঠতে। গল্পের প্রয়োজনে উনার কাব্যিক ছন্দগুলো পাঠককে আকর্ষিত করে রাখে বইয়ের প্রতিটি প্রতিটি লাইন, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসমান উপন্যাস পড়ার পর থেকে গত তিন-চার বছর ধরে প্রতি বইমেলায় অপেক্ষায় থাকতাম উনার নতুন বইয়ের জন্য। প্রতি বছরের মতো এবার সে অপেক্ষার প্রহর শেষে হাতে পেয়েছি নতুন বই ‘নূর’।
গতকাল রাতে বইমেলা থেকে ফিরেই এক বসায় পড়ে শেষ করলাম নূর।
বরাবর উনার অন্যান্য উপন্যাসের মতো নূর উপন্যাসের গল্পটা তুলে ধরেছেন ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে। শিবলী প্রেম-ভালোবাসা, ধর্ম, আধ্যাত্নিকতা আর ইনসাফ প্রতিষ্ঠার গল্প বলেছেন ইতিহাসের বয়ানের মধ্যদিয়ে।
যে ইতিহাসকে আশ্রিত করে তিনি গল্প তৈরি করেছেন, সে ইতিহাস আমাদের প্রত্যকের কমবেশি জানা আছে।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের পর বাংলা ও বিহার দখলে করে দীর্ঘ সময় ধরে ইংরেজ শাসকরা নানা অত্যাচার নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিলো মুসলিম, কৃষক আর অপেক্ষাকৃত দূর্বল হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর। সেসময় ক্ষমতার লোভ আর রাজত্বের জন্য ইংরেজদের সাথে মিশেছিল হিন্দু জমিদাররা।
ঠিক সে সময় তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন স্থানে ফকির সন্ন্যাসীরা গড়ে তুলেছিলো গেরিলা বাহিনী। মজুন শাহসহ একাধিক ফকির সন্ন্যাসী সে সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলো ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাধারণ কৃষক, মসুলিম সাধক আর হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহে। সে ইতিহাসের ঘটনাকে আশ্রিত করে নূর উপন্যাসের গল্প বলেছেন লেখক।
যেখানে ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে মিলবে প্রেম-ভালোবাসা, আধ্যাত্নিকতা, স্বজাতিপ্রীতি আর ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঈমানের অগ্নি পরিক্ষা।
নূরের বিশালায় এক অন্ধ নারীর অন্তর দিয়ে উপভোগ করা যাবে পৃথিবীর সৌন্দর্য! যাঁরা ভালোবাসায় পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত, ঘৃণিত ব্যক্তিটির জীবন আমূল বদলে যায়। জমিদারি বিলাসী জীবনযাপন থেকে তিনি নেমে আসেন সাধারণ মানুষের কাতারে।
শিবলী ভাইয়ের পূর্বের বেশ কয়েকটি উপন্যাসে দেখা যায় একজন ইমাম সাহেবের উপস্থিতি থাকে, বরাবরের মতো নূর উপন্যাসেও রয়েছে একজন ইমাম। তবে এই ইমামের চরিত্র অন্যসব উপন্যাসের ইমামকে (আসমান ব্যতিত) ছাড়িয়ে যাবে মুগ্ধতা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়।
যেখানে দেশপ্রেম, ইনসাফ, ন্যায় বিচার আর স্রষ্টার একাত্মবাদ কায়েমের কাছে তার জীবনের মায়া তুচ্ছ হয়ে যায়। যিনি একত্রিত করেন মজলুমদের, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে। স্বপ্ন দেখান একটা ভগ্নতুর জাতিকে, কিভাবে জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে নিজেদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হয়।
শিবলী ভাইয়ের একটা বড়ো বৈশিষ্ট্য হোলো- তার চিন্তা-চেতনা এবং বিশ্বাস সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে পুরোপুরিভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন; যা বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখক পারেন না। রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন ধর্মের পাঠকের কথা চিন্তা করে তাকে শব্দ চয়নে অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়! কোনো লেখক বিশ্বাস করেন আমাদের সৃষ্টিকারী আল্লাহ, হয়ত তিনি লিখতে গিয়ে লেখেন সৃষ্টিকারী। আল্লাহ শব্দ বাদ দিয়ে দেন ধর্মীয় পাঠকদের কথা চিন্তা করে। কিন্তু লতিফুল ইসলাম শিবলী এই জায়গায় পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তিনি তার চিন্তাভাবনা পুরোপুরিভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেন, এবং পাঠকও সেগুলো সহজে গ্রহণ করতাছে। যার অন্যতম প্রমাণ— তিনি এমন একটা ফ্যানবেজ তৈরি করেছেন, যারা প্রতি বছর বইমেলার অপেক্ষায় থাকে উনার বইয়ের জন্য।
এবার আসি একটু সমালোচনায় – নূর উপন্যাস শুরুর দিকে ধীরগতিতে এগিয়েছে শেষদিকে মনে হয়েছে লেখক সম্ভবত একটু তাড়াহুড়ো করেছেন সমাপ্ত করতে। উপন্যাসের মাঝামাঝিতে বেশ কিছু গ্যাপ চোখে পরেছে। বিশেষ করে এক পর্ব থেকে আরেক পর্বে যাওয়ার সময় গ্যাপটা খুব স্পষ্টতর বুঝা যায়। আর মাঝের চরিত্রগুলোতে কিছু অমিল ছিলো, খুব দ্রুতই এক চরিত্র থেকে আরেক চরিত্রে রূপায়ন লক্ষ্য করেছি বেশ কয়েক পৃষ্ঠায়। যেহেতু শুরুতেই বলেছি উনার কাছে আমার প্রত্যাশা অনেক বেশি, তাই হয়ত ব্যাপারগুলো একটু বেশি দৃষ্টিকটু লেগেছে। আশাকরি পরবর্তী বইয়ে সে-সবের ছাপ থাকবে না।
যাহোক, শেষ করি – খুব অল্পসংখ্যক বই আপনাদের হাইলি রেকমেন্ড করি। এই অল্পসংখ্যকের মধ্যে এবারের বইমেলায় নূর একটি। সংগ্রহ করতে পারেন নূর – উপভোগ করুন একজন অন্ধ নারীর অন্তর শক্তি দিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য!read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৩
গল্পটি পলাশীর যুদ্ধের কয়েক দশক পরের যখন সিরাজুদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যূত করে ক্ষমতায় এলো ইংরেজরা, তারপর চারিদিকে বসালো তাদের তাবেদার ও চাটুকার শ্রেণীর জমিদারদের, যাদের লক্ষ্যই ছিল ইংরেজদের খাজনা ঠিকমত আদায় করে দিয়ে নিজের জমিদারি ঠিক রাখা।
read more...
সেই লক্ষে যখন করের পরিমাণ হয়ে দাঁড়ালো ১০/১৫ শতাংশের জায়গায় ৫০ শতাংশ, ধান গম চাষের পরিবর্তে কৃষকদের বাধ্য করা হলো নীল চাষে, আর ঠিক এসবের উপরে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসলো ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, সাথে জমিদার ও পাইক পেয়াদা নির্যাতন ফ্রী। ঠিক এমন সময়ে এতসব অনাচারের বিরুদ্ধে মজনু শাহ ও ভবানী পাঠকের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়াল সুবেবাংলার ফকির ও সন্ন্যাসীগণ, যারা সংগঠিত করল প্রায় ৫০ হাজার মুসলিম সাধক, হিন্দু সন্ন্যাসী, মজলুম কৃষক ও কিছু চাকুরীচুত্য নবাবের সৈন্যদের এবং শুরু করল ইংরেজদের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ। তাদের কাছে হয়তো ছিল না বন্দুক অথবা কামান, কিন্তু বেনিয়া ইংরেজ ও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিজের সর্বস্ব দিয়ে।
ঠিক এই প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা হয়েছে “নূর”।
উপন্যাসে আপনি দেখতে পাবেন মজনু শাহ ও দুর্ধর্ষ ইংরেজ সেনাপতি ব্রেনানের রণকৌশলের চিত্র, দেখতে পাবেন মজনু শাহ কর্তৃক নিয়োজিত সোবহান শাহ কিভাবে উত্তরবঙ্গের অত্যাচারী জমিদার অশোক গুপ্তের বিরুদ্ধে জাগ্রত করে সুবে বাংলার মানুষকে, দেখতে পাবেন সোবহান শাহ’র জন্মান্ধ মেয়ের অসাধারণ অনুভূতির ক্ষমতা, দেখতে পাবেন দেও মহলের কৃত্রিম দানব এর মানুষ হয়ে ওঠার গল্প।
ইন্টারের ইতিহাস বইয়ে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নিয়ে হাফ পৃষ্ঠার মত লেখা পড়েছিলাম, তখনই মনে হয়েছিল এ নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করলে ভালো লাগবে, হালকা কিছু পড়াশোনা করেছি, এরপরে এবছর পড়লাম ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এর ওপর লেখা “নূর” নামের অসাধারণ এই বইটি।
উপন্যাসের প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই এটি আপনাকে একদম ডুবিয়ে ফেলবে। অন্যান্য উপন্যাস যেমন প্রথমে বেশ কিছু অংশ পড়া লাগে তারপর পাঠক ধীরে ধীরে গল্পের মধ্যে প্রবেশ করে, এই উপন্যাস ঠিক তার বিপরীত, এখানে আপনি প্রথম অংশ থেকেই গল্পে ঢুকে যাবেন, আপনার মধ্যে এটি একটি আলোড়ন সৃষ্টি করবে। কাহিনীর গতিতে আপনি নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাবেন না, পরবর্তীতে মধ্যের অংশে সে গতি কিছুটা কমবে কিন্তু আপনি মনে মনে অপেক্ষা করতে থাকবেন গল্পের মধ্যে এক মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য। উপন্যাস শেষে আপনার লেখক এর উপর রাগ হতে পারে একটাই কারণে যে, লেখক কেন বইয়ের কলেবর ১৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেন?
মজনু শাহ কি পারবেন ব্রেনানের রণকৌশল ও উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এর সামনে টিকে থাকতে? সোবহান শাহ ও কী পারবেন মজলুম জনতাকে অশোক গুপ্ত’র হাত থেকে বাঁচাতে? আর এক জন্মান্ধ নারী দেও মহলের দানবের মধ্যে সম্পর্কটাই বা কি? যদি জানতে চান এসবের উত্তর, তাহলে এখনই পড়ে ফেলুন Latiful Islam Shibli সাহেবের অসাধারণ এই বইটি।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৪
জেল থেকে বলছি, তুমি আমার প্রথম সকাল, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, হাসতে দেখো গাইতো দেখো – এ গানের লাইনগুলোর সঙ্গে জুড়ে আছে শিবলীর নাম। শিবলী কে? লতিফুল ইসলাম শিবলী!
read more...
জেল থেকে বলছি, তুমি আমার প্রথম সকাল, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, হাসতে দেখো গাইতো দেখো – এ গানের লাইনগুলোর সঙ্গে জুড়ে আছে শিবলীর নাম। শিবলী কে? লতিফুল ইসলাম শিবলী! আরেকটু বড় পরিসরে নাম বললে তার পরিচয় দাড়ায়, ‘আসমান’, ‘অন্তিম’ ও ‘দরবিশ’ এর শিবলী। এবারে নতুন একটি উপন্যাস লিখেছেন ‘নূর’। নূর শব্দ শুনলেই প্রথমে মনে পড়ে সেই কুরআনের আয়াত, “আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি মাছালু নুরুহি কামিশকাতুন ফি’হা মিছবাহ”। ‘নূর’ এ নতুন কিছু লিখেছেন, যা মানুষের অগোচরে ছিল? হ্যাঁ, লিখেছে। সেটা হলো, ফকির মজনু শাহ, সোবহান শাহদের ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধা দিয়েছিল ইংরেজ বাহিনী। তাই তারা বিদ্রোহ করেছিল, যেটাকে আমরা জানি ‘ফকির বিদ্রোহ’ হিসেবে। ইতিহাসবিদরা আমাদের একথা শিখিয়েছেন। সেখানে শিবলী দিচ্ছেন ভিন্ন বয়ান, কী সেই বয়ান? এক কথায় বিশ্বাসের বয়ান।
শিবলী শেখাচ্ছেন, ফকিররা শুধুমাত্র তাদের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় জমিদার বাহিনী ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, বিষয়টি সত্য নয়। আসলে ফকিররা চেয়েছেন, পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত হওয়া স্বাধীনতার সূর্যকে ফিরিয়ে আনতে, ফকিররা চেয়েছেন জুলুমের রাজত্বের অবসান, ফকিররা চেয়েছেন তিন ফসলি জমিতে নীল চাষের বাহিরে গিয়ে ধান, গম, ভুট্টার চাষ; ফকিররা চেয়েছেন মানবতার মুক্তি, জমিদারের অত্যাচারের মুক্তি, তারা চেয়েছেন কৃষকের মুক্তি। মুক্তির জন্য লড়েছেন, অস্ত্র হলো ‘বিশ্বাস’। একদল মুক্তি পাগল যোদ্ধাকে নিয়ে নিরন্তর ছুটে চলেছেন ফকির মজনু শাহ, ভাগ করে দিয়েছেন অঞ্চল। মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন, কৃষকের হৃদয় কেড়ে নিয়েছেন, অন্তর দিয়ে ভালোবাসা আদায় করেছেন।
শিবলী ‘নূর’ উপন্যাস উৎসর্গ করেছেন একজন ফকিরকে। নাম ফকির মজনু শাহ। ফকিরের জন্য লিখেছেন দু’কলম। উল্লেখ করেছেন,
‘নূর’
উৎসর্গ
ফকির মজনু শাহ্
জালিমের বিরুদ্ধে ইনসাফ কায়েমের লড়াইয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী আপনাকে স্মরণ করা হবে। মহান আল্লাহ্ আপনাকে এবং আপনার সহযোদ্ধাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।
‘নূর’ ফকির সোবহান শাহ’র জন্মান্ধ মেয়ে। চোখে দেখেন না, তবে বিশ্বাস আছে হৃদয়ে। হৃদয়ের চোখে অবলোকন করেন, দেখেন ; বর্ণনা করেন। তাইতো অত্যাচারী জমিদার অশোক গুপ্তের আগুনপোড়া ছেলে সমুদ্র গুপ্তকে ‘সুন্দর মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যাকে দেখে ভয় পেয়েছিল ফাতেমা, যার আয়না দেখা ছিল বারণ। রক্তদহ বিলের কাছে গিয়ে নিজের চেহারা নিজে দেখে বিগড়ে যেতেন ‘সমুদ্র গুপ্ত’। সমুদ্র গুপ্ত হয়ে উঠেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে সোবহান শাহ’র জন সাহায্য। কাচারি ঘর থেকে সোবহান শাহকে মুক্তি দিয়েছেন সমুদ্র গুপ্ত, পিতার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।
‘নূর’ থেকে একগুচ্ছ মনি মুক্তো –
এক. আমরা আমাদের মৃত্যুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের হাতে তুলে দেইনি, বরং আমরা আমরা মৃত্যুকে তুলে দিয়েছি আল্লাহর হাতে। নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তোমার মৃত্যু হবে, কিন্তু আল্লাহর হাতে তুলে দেওয়া জীবন প্রবেশ করবে সসীম জীবন থেকে অসীম জীবনে। যারা মনে করে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়াটাই মৃত্যুর কারণ, শুধু তাদেরই মৃত্যু হবে….।
দুই. জালিম শাসকদের প্রধান অস্ত্রের নাম আতঙ্ক। ঠিকমতো আতঙ্ক তৈরি করতে পারলে, শাসনের অর্ধেক কাজ করে দেয় আতঙ্ক। আতঙ্ক তৈরির সময়টা বড় ভয়াবহ হয়। একবার আতঙ্ক তৈরি করতে পারলে জালিম শাসক সেটার সুফল ভোগ করে দীর্ঘসময় পর্যন্ত।
তিন. ধৈর্য, নীরবতা, একাকিত্ব – এসব সেই অবস্থা যা ঋষি এবং দরবেশ শ্রেণির মানুষেরা চর্চা করে কামেল হন, সিদ্ধার্থ হন।
চার. অন্ধকার কখনো আলো ভালোবাসো না, দেখ না বাদুড় আলোকো ঘৃণা করে।
পাঁচ. মানুষ ভয়ংকর হয় তার কর্মে, চেহারায় না।
ছয়. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়াল পরিকল্পনা করেন, আর মানুষ ঘুরে-ফিরে সেই পরিকল্পনাই অনুসরণ করে। মানুষ সেটাকে বলে ‘ঘটনা’।
সাত. আসল চেহারাতেই তুমি বেশি সুন্দর, তোমাকে ছদ্মবেশে মানায় না।
আট. মানুষের জীবনের বেশিরভাগ গল্প লেখা থাকে পথের মধ্যে। যে পথিক হেঁটে যায়, সে তার পদচিহ্নের ভেতরে রেখে যায় গল্প। পরের পথিকের সঙ্গী হয় আর পথ দেখায় সেই গল্পগুলো।
নয়. অন্ধকারের মধ্যে বিদায়ের একটা সুবিধা আছে, সেখানে আবেগের প্রকাশটা চোখে দেখা ায় না, শুধু গোপনে অনুভব করা যায়।
দশ. মানুষ ভুল করে অনেক কিছুর ভুল নাম দেয়,মানুষ যেটাকে ভালোবাসা বলে সেটা আসলে – মায়া।
☘️ ‘নূর’ এ ভুল –
বানান, শব্দগত ও বাক্যগত ভুল পরিলক্ষিত হয়নি। তবে বইয়ের ৫৭ নং পৃষ্ঠায় সাহাবী আকরাম ইবনে আবিল আকরামের জায়গায় হবে ‘আরকাম ইবনে আবিল আরকাম (রা:)।’
☘️ পাঠকের প্রতি দু’কলম –
আপনি যদি বোদ্ধা পাঠক হন তাহলে আপনার জন্য সুসংবাদ, আপনি এক বসাতেই বই পড়তে পারবেন। আপনি যদি আমার মতো গোবেচারা ধরণের পাঠকও হন তাও আপনার জন্য সুসংবাদ, আপনি বই পুরো শেষ না করে টেবিল থেকে উঠতে পারবেন না। বিশ্বাস হয় না? শুরু করুন ‘নূর’ পাঠ….
দীর্ঘজীবী হোক শিবলী, গল্প হোক বিশ্বাসের, কায়েম হোক ইনসাফ….read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৬
এই সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক জনাব Latiful Islam Shibli প্রতি বছর একটা মাত্র বই লেখেন। তবে এই একটা মাত্র বই-ই পাঠক হৃদয়ে ঝড় তুলতে যথেষ্ট।
read more...
সে ধারাবাহিকতায় এবছর বইমেলায় এসেছে ওনার লেখা বই “নূর”। আমরা সবাই জানি নূর মানে আলো। এই বইটির প্রতিটি শব্দ যেন এক একটা ধ্রুব তারা। আর প্রতিটি লাইন যেন শত-সহস্র তারায় গাঁথা মালা। তাই এই বইটি যে অগণিত পাঠকের মনে আলো ছড়াবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বইটি মূলত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ‘ফকির বিদ্রোহের’ পটভূমিতে লেখা হয়েছে। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হওয়ার পরের তিন দশকের এই ইতিহাসের কথা অনেকেই বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে। নবাবের চাকরীচ্যুত সৈন্য, সাধারণ কৃষক, মুসলিম সাধক ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার সদস্যের এক বাহিনী গড়ে তোলেন ইতিহাসের এক মহানায়ক। যার নাম ফকির মজনু শাহ। এই বাহিনী নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ইংরেজ শাসক ও হিন্দু জমিদারদের নিপিড়ন ও জুলুমের বিরুদ্ধে গেরিলা লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হয়তো পরাজিত হয়েছেন; কিন্তু তিনি প্রবল পরাক্রমশালী জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার যে স্পর্ধা দেখিয়েছেন, তা কেয়ামত পর্যন্ত নিপিড়ীত ও মজলুম মানুষদেরকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
এই বইয়ে লেখক ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর মাধ্যমে যে কথাগুলো বলেছেন তা এই সময়েও বেশ প্রাসঙ্গিক। যেমন: কেন মানুষের উপর জালিম শাসক চেপে বসে? কোন কায়দায় জালিম শাসক তার শাসন বজায় রাখে? জালিম শাসকের জুলুম থেকে মুক্তি লাভের উপায়ই বা কি? কিভাবে একটা নিপিড়ীত জাতিকে জালিমের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে হয়? হৃদয়ের চোখ, না দেহের চোখ; কোন চোখের শক্তি বেশি? সাধারণ আগুন ও ঘৃণার আগুনের মধ্যে কোন আগুন বেশি তেজস্বী?
বইয়ের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ:
“আমরা আমাদের মৃত্যুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের হাতে তুলে দেইনি, বরং আমরা আমাদের মৃত্যুকে তুলে দিয়েছি আল্লাহর হাতে। নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তোমার মৃত্যু হবে, কিন্তু আল্লাহর হাতে তুলে দেওয়া জীবন প্রবেশ করবে সসীম জীবন থেকে অসীম জীবনে।”
“সাধারণ আগুনের চেয়ে ঘৃণার আগুন অনেক তেজস্বী। হাড় মাংস পুড়ে ছাই হলে সাধারণ আগুন নিভে যায়। কিন্তু ঘৃণার আগুন অন্তরকে পোড়ানোর জন্য জ্বলতে থাকে দীর্ঘদিন।”
“জালিম শাসকদের প্রধান অস্ত্রের নাম আতঙ্ক। ঠিকমতো আতঙ্ক তৈরি করতে পারলে, শাসনের অর্ধেক কাজ করে দেয় আতঙ্ক।”
“প্রতিটি জুলুমকে তার মূল্য পরিশোধ করতে হয়। একদিকে শক্তিমত্তায় জালিম নিজেকে পরাক্রম ভাবতে থাকে, অন্যদিকে সবার অলক্ষ্যে তার ধ্বংসের বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে বাড়তে বাড়তে পরিনত হয় মহিরুহে।”
“আপনার কর্মটাই দ্বীন। আপনার কর্ম বলে দেবে আপনি কোন দ্বীনের অনুসারী। দ্বীন ছাড়া কারও জীবন নেই। ‘ দ্বীন’ অথবা ‘বেদ্বীন’ আপনি যেকোনো একটার মধ্যে আছেন। বেদ্বীনটাও দ্বীন। কিন্তু সেটা আল্লাহর মনোনীত দ্বীন নয়।”
“চোখ থাকলেই দানব দেখা যায়, আবার চোখ থাকলেই মানুষ দেখা যায় না। দানব দেখতে চোখ লাগে, আর মানুষ দেখতে লাগে অন্তর। ”
“মানুষ ভুল করে অনেক কিছুর ভুল নাম দেয়, মানুষ যেটাকে ভালোবাসা বলে সেটা আসলে – মায়া।”
সাধারণত ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাসে অনেক সময় ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু “নূর” উপন্যাসে ইতিহাসের গতি প্রবাহ ঠিক রেখেই লেখক ইতিহাসের গল্প বলেছেন। তাই যারা কাঠখোট্টা ইতিহাসের বই পড়তে চান না কিন্তু ইতিহাস জানতে চান, তাদের জন্য এই বইটি বেশ সুখপাঠ্য হবে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও এই বইয়ে কিছু গভীর দর্শনের কথা বলা হয়েছে। যা একজন চিন্তাশীল পাঠকের চিন্তার খোরাক যোগাবে।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৭
এই সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক জনাব Latiful Islam Shibli পাঠক যখন কোন গল্প – উপন্যাস পড়ে তখন সেখানকার ঘটনা বা চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেকে খোঁজে, আমি যখন নূর পড়ছিলাম তখন এই উপন্যাসের নারী চরিত্র, “নূর”এর ভাবনার সাথে নিজেকে খুঁজে পেয়ে পুরোপুরি ঘোরে আবিষ্ট ছিলাম ভীষনভাবে।
read more...
লেখার মধ্যে ঘোর তৈরি করা খুব সহজ নয়, পাঠক যেন মনোযোগ সরাতে না পারে ও ঘটনায় আটকে যান, লেখকের এই মুন্সিয়ানার প্রতিফলন আছে তার প্রত্যেকটি উপন্যাসেই। এর আগে তাঁর দারবিশ, আসমান পড়েছি। এবার পড়লাম ‘নূর’। আগের দুটো উপন্যাসের মতো এটিও উঠে এসেছে পছন্দের তালিকায়। পলাশী যুদ্ধের পরের এ ইতিহাস নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হতে শোনা যায় না। আমি অন্তত এ বিষয়ক কোনো গ্রন্থ পড়িনি। শিবলী স্যার ইতিহাসকে এমন করে তুলে ধরেছেন যাতে তা সত্যতা না হারায়। ইতিহাসের পরতে পরতে উঠে এসেছে প্রেম ভালোবাসার কথা। এমনভাবে এসেছে যা পড়ে পরবর্তী অধ্যায় পড়ার উৎসাহ বরং বেড়েছে। বর্ণনাগুলোও ছিল বিস্তারিত। চরিত্রের বর্ণনায় চোখের সামনে উঠে এসেছে চরিত্রগুলোর অবয়ব। সবকিছু মিলে চমৎকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তথ্যবহুল উপন্যাস ‘নূর’ পাঠকের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করবে সন্দেহ নেই। যারা এখনো ” নূর” এ ডুব দেননি তারা একবার ডুবে দেখুন, তৃপ্ত হবেন আশাকরি । উপন্যাসের শেষ অংশে নিজেকে সামলাতে পারিনি, অজান্তেই চোখ ভিজেছে।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৮
এই সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক জনাব Latiful Islam Shibli যদি ফিকশন, থ্রিলার পছন্দ করেন, একই সঙ্গে বাংলার ইতিহাস নিয়ে ভাবেন, তাহলে আপনার জন্য নালন্দার প্যাভিলিয়নে আছে ‘নূর’।
read more...
লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখার ধরণের সাথে পরিচয় না থাকলে হয়ত তাঁর ‘আসমান’ আগে পড়ে ফেলতে পারেন, অথবা সরাসরি ‘নূর’ দিয়েই যাত্রা শুরু করে ফেলতে পারেন।
নূর অবশ্য লেখকের অন্যান্য বইয়ের চেয়ে আলাদা। এর কারণ এর পটভূমি। তাঁর অন্যান্য লেখায় এসেছে শহরের মধ্যখানের গল্প, বর্তমান সময়ের গল্প, বিপ্লবের ডাক। আর নূর ইতিহাসের ক্ষয়িষ্ণু পদক্ষেপকে নতুন করে এঁকে দিতে এসেছে। শুধু আঁকা নয়, পাঠক,নূর আপনার মনে প্রবল আকাঙ্ক্ষা এনে দিতে এসেছে ইতিহাসকে নতুন করে খোদাই করতে।
শব্দটাও খুব অদ্ভুত, এই নূর শব্দটা। সে নূর হলেও তার চোখে যেমন আলো নেই। আবার, সে নূরে সে উজ্জ্বল করেছে গোবরে জন্ম নেওয়া এক পদ্মকে, সমুদ্র যার নাম।
বইটা শেষ করেছি যখন, রাত প্রায় এগারটা। বাকী রাত, এবং পরদিন, কিচ্ছু হাতে নিতে পারি নি। মাথায় শুধু নূর, নূরের আলোয় আলোকিত হওয়া এক ভয়ানক ‘দেও’র কাহিনী। আর কী হতে পারতো, কেন হয়নি, ইতিহাসে আসলেই কী হয়েছিলো? তিন দিন পর, এখনও, মাথা থেকে এই প্রশ্নগুলো বের হচ্ছে না।
Latiful Islam Shibli ভাই, এইসব জেনেই কি অনেকগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে কলম তুলে ফেলেছেন?read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ৯
এই সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক জনাব Latiful Islam Shibli অনেকদিন পরে দুর্দান্ত একটা গল্প পড়লাম।জানলাম অনেক অজানা ইতিহাস।লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের লেখা “আসমান” পড়ার পর একটা ঘোরের মধ্যে কেটেছিল আমার বেশ কয়েকটা দিন।
read more...
সেই ঘোর কাটানোর জন্য এবার এর ২১ শের বইমেলায় গিয়ে উনার লেখা “নুর”সহ সবগুলো বই সংগ্রহ করে এনেছি।নুর পরে শেষ করার পর নিজেকে সমুদ্র গুপ্ত মনে হচ্ছে আর মনে হচ্ছে এখনই বেড়িয়ে পড়ি আমার জন্মান্ধ নুরের খোঁজে।হয়ত ক্ষমা পাবো,হয়তো নতুন করে বাঁচবো এক সাথে।ঠিক যেমন আসমান পড়ার পর ও নিজেকে ওমার মনে করে অন্ধকার সেলের ভিতরে আসমান এর জন্য কেদেছিলাম।লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই এর লেখা গল্প গুলো এমন যেন মনে হয় নিজের জীবনকে পড়ছি আর এর সাথে সাথে দেখছি আর জানছি অনেক অজানা ইতিহাস।।নুর কে ভুলতে বেশ সময় লাগবে আমার।হয়ত উনার লেখা রাখাল,দারবিশ,অন্তিম বা ফ্রন্টলাইন নুর কে ভুলিয়ে নিয়ে যাবে আমাকে অন্য কোন এক জগৎে।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১০
হাল জামানার একজন শক্তিশালী লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী। তার লিখার ধরণ যেমন অসাধারণ তেমনি অনন্যসাধারণ তার চরির্ত্র নির্মান।
read more...
প্রথমে তিনি জীবনের, ইতিহাসের, বর্তমান সমাজের একটি বড় ক্যানভাস বেছে নেন, তারপরে সেই ক্যানভাসে যুক্ত করেন কিছু চরিত্র। যে চরিত্রগুলো থেকে প্রস্ফূটিত হয় জীবনাদর্শ, জীবনবোধ, সত্য, সৌন্দর্য, সাহস, জীবনের উদ্দেশ্য এবং এরকম আরো নানান গুনাবলী। তার চরিত্রের মুখ থেকে উৎসারিত হয় অসাধারণ কিছু সংলাপ, যা মানুষের চিন্তাকে জাগ্রত করে, মননকে পরিশীলিত করে, ইতিহাসের দিকে আকৃষ্ট করে তথা পাঠককে পাঠে আনন্দ দান করে। তাতে চরিত্রগুলো হয়ে উঠে শিক্ষণীয়, অনুকরনীয় ও অনুসরনীয়। এক কথায় তার একেকটা বই যেন পাঠককে নিয়ে যায় চিন্তার এক নতুন জগতে, উপলদ্ধির এক নতুন ধারায়। নূর উপন্যাসটিও তার ব্যতিক্রম নয়, আলহামদুলিল্লাহ। বাংলার মুসলিমদের পতনের ইতিহাসের যে অধ্যায়টি ছিল কালো মোড়কে ঢাকা, পরাজয়ের গ্লানিতে ভরা নূর উপন্যাসের নূর নামক অন্ধ মেয়েটি সেই সমাজে তার আলো ছড়িয়েছে ভালোবাসা দিয়ে ও সত্য উপলদ্ধি দিয়ে। ভালোবাসার এই অসীম ক্ষমতা জগতের সমস্ত অন্ধকারকেই দূরীভূত করতে পারে, যেখানে ঘৃণা নেই, সাম্প্রদায়িকতা নেই, শোষণ নেই, বন্চনা নেই বরং আছে সত্য উচ্চারণ, সত্য উপলদ্ধি, সাহস এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ।
ইতিহাস হলো একটি জাতির মনমানস গঠনের মূল রস। সেই রস সন্চিত করে গড়ে উঠে বর্তমান সমাজ এবং অতীতের শিক্ষা নিয়ে সেই সমাজ তৈরী করে বর্তমান সময়ের চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব। একটি জাতি গঠনের মূল দর্পন হলো সেই জাতির ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানা। নূর নামক উপন্যাস বাংলার সেই ইতিহাসকে আলোকিত করেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাসকে পাঠকের সামনে নিয়ে এসেছে। যে ইতিহাস পড়ে বর্তমান সমাজের চরিত্রগুলো উজ্জীবিত হবে এবং ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে পূর্বপুরুষের আলোকে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করবে।
আমরা এই লেখকের কাছ থেকে দুনিয়ার ও সমাজের ইতিহাসের বড়বড় ক্যানভাস থেকে জীবন সংগ্রামের, বলিষ্ঠ চরিত্রের এবং সত্য ও ন্যায় আদর্শের আরো নতুন নতুন উপন্যাস ও চরিত্র আশা করবো। পাঠক হিসেবে এবং তার শুভাকাংখী হিসেবে আমাদের এতটুকুই প্রত্যাশা।read less
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১১
এসময়ের যে ক’জন লেখক সিদ্ধহস্তে লিখে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে এই একটা মানুষ কে দেখে আমার ভিষণভাবে হিংসে হয়,
কি চমৎকার তাঁর লেখার ধরণ।read more...
মন্ত্রমুগ্ধের মতো পাঠককে বেঁধে রাখেন তাঁর গল্পে।
তাঁর লেখাগুলো আসলে গল্প নয়, ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে পাঠকের সামনে কখনো কখনো মেলে ধরেন ফকির মজনু শাহ্’র জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইমানীদীপ্ত কাহিনী, কখনো বা ৭০-৮০ শতকের হতাশাগ্রস্ত যুবক এর লোমহর্ষক ঘটনা , যে কি-না ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিল সানফ্রান্সিসকোতে ডাক্তারি পড়তে, কিন্তু তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া অসম্ভব সবকিছু খুব সহজেই তুলে এনেছেন তাঁর সাহিত্যপঠে। আবার তিনি তুলে ধরেছেন আমেরিকার কুখ্যাত জেল গুয়ান্তানামাবে থেকে বিনা বিচারে ১২ বছর পর মুক্তি পাওয়া এক বাংলাদেশীর কথা।
সবমিলিয়ে তিনি এক অসম্ভব সুন্দর লেখক, যিনি তাঁর জাদুর লেখনীতে পাঠককে মুগ্ধ করে রাখেন, সাথে সাথে দিয়ে জান অসংখ্য না জানা বিষয় পাঠকের মানস্পটে।read less