ভয় করে,
এখন আমার বড় ভয় করে প্রিয়তমা,
শীতসন্ধ্যার কুয়াশার মতো রহস্যময় এক ভয়
আমার আনন্দকে ঘিরে থাকে সারাক্ষণ।
এর আগে এমন ভয় আমি কোনো দিন পাইনি।
আমার সেই অনেক না পাওয়ার শৈশবে
কত নিকষ কালো শেষ রাতে একা আমি
ট্যাটা হাতে ছোট্ট ডিঙি নৌকায় করে
ঝাড়-জঙ্গল পেরিয়ে মাছ ধরতে চলে যেতাম ধু ধু মধ্যবিলে
তখন বাতাসে শুনতে পেতাম
পিশাচের ফিসফিস কানাকানি
আমার শিয়ালের মতো চোখ আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠত
ধানের ছড়া কেশেল হোগলার নড়াচড়ায় –
দক্ষ হতে গেঁথে ফেলতাম মাছ।
বাইন ভেবে গর্তে হাত ঢুকিয়ে কতবার ভুল করে চেপে ধরেছি
বিষাক্ত সাপের মাথা
আমার মা উঠানে বসে ছাই দিয়ে কী সুন্দর করে
কুটতো ধরে আনা মাছ
মায়ের সেই উজ্জ্বল মুখ দেখার জন্য ডিঙি নৌকা নিয়ে
প্রয়োজনে আমি তখন সমুদ্রেও যেতে পারতাম
তখন যে সাহস ছিল,
একটুও পাইনি ভয় কখনো ।
রাতের আঁধারে ভয়াল কালী মূর্তির সামনে থেকে
চুরি করে খেয়েছি ভোগের মিষ্টি এবং কলা
কালী মা চেয়ে চেয়ে দেখেছে আমার সাহস,
ঝড়ের শেষে আমাকেই প্রথম যেতে হতো
নির্জন শ্মশান তলায় তাল কুড়াতে।
যে বয়সে শেয়ালের কান্না শুনে ভয় পাওয়ার কথা
সে বয়সে আমি বাঙ্গি ক্ষেতের পাশে
শেয়াল ধরার জন্য ফাঁদ পেতে রাখতাম,
কী সব দিন ছিল তখন, ভয় পাওয়ার কত উপাদান ছিল
তবু বুকের মধ্যে ভয় ছিল না কোন,
সেই আমি এখন ভয় পাই,
প্রতিবাদী তারুণ্যের বিপজ্জনক ছাত্ররাজনীতির
দিনগুলিতে
আগুনঝরা দিনগুলিতে
এক নায়কের বন্দুকের নলের মুখেও ছিলাম,
মিছিলে সামনের মানুষ
কত রক্তপাত দেখেছি
কত প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছি
নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছি প্রিয় সহযোদ্ধাকে ……
পুলিশের রিমান্ডে উল্টো করে ঝুলন্ত যে আমি
পেন্ডুলামের মতো ঢুলতে ঢুলতে
মৃত্যুকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি
সেই আমি এখন ভয় পাই
আলোকিত দেয়ালের অন্যপাশের ছায়ার মতো ভয়
আমাকে অস্থির করে রাখে
আমার শৈশব কৈশোর তারুণ্যে সঞ্চিত সমস্ত সাহস
ম্লান হয়ে যায় এই ভয়ের কাছে।
প্রিয়তমা, আমার এই বিশাল ভয়টা অন্য কিছু নয়
এখন শুধু তোমাকে হারাবার ভয়।