ছেলেগুলো সামার ভেকেশন কাটাতে চলে গেছে নানার বাড়ি। আমার ২ হাজার স্কয়ার ফিটের বাসাটা নিরব নির্জন হয়ে আছে। আজ খুব একটা অনন্ত দুপুর। বাসার সামনের লেকের সবুজ জলরাশি আর তার পাড়ের বৃক্ষ লতাপাতার উপর মাতাল বাতাসের হাহাকার। চৈত্রের এই সব দুপুরগুলো মানুষকে শৈশবে ফিরিয়ে নেয়, এই দুপুরগুলো আমার অনেক চেনা। বাড়িতে শুধু আমি আর মা। আজ আমি কোথাও যাবো না। মায়ের জন্য রান্না করবো বলে আজ অনেক দিন পর বাজার গিয়েছি। আমরা মা বেটা সেই ছেলেবেলার মত গল্প করতে করতে রান্না করেছি, মা আমাকে টুকটাক সাহায্য করেছেন, মুল রান্নাটা আমিই করেছি। তারপর দুজন মিলে দুপুরে একসাথে খেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ্ লাইফ ইয সো বিউটিফুল…… আজ মনে হচ্ছে একটা মা থাকলে দারা পুত্র পরিবার আর কিছুরই প্রয়োজন নেই ।
অদুরে আমার স্টাডি রুম থেকে দেখতে পাচ্ছি মা গভীরভাবে ঘুমাচ্ছেন, হটাৎ আমার মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো, মানুষ কেন বৃদ্ধাশ্রম বানায়???
বৃদ্ধাশ্রমগুলো সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া উচিৎ । বৃদ্ধাশ্রমের আইডিয়াটা আমাদের জন্য নয়। এটা যত জনপ্রিয় হবে, ততই আমাদের বৃদ্ধ পিতামাতার দুর্গতি বাড়বে। বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে দূরে সরিয়ে রাখার কোন অপশনই থাকা উচিৎ নয়। আমি বৃদ্ধাশ্রমের এই কনসেপ্টকে ঘৃণা করি। বৃদ্ধাশ্রম তাদের জন্য হতে পারে যারা কুকুরকে কোলে নিয়ে নিজের শিশুকে পুশ চেয়ারে ঠেলে, এটা সেই বাবা মায়ের জন্য যারা নিজেদের আনন্দ বিঘ্ন হবে বলে খুব শৈশবেই সন্তানের রুম আলাদা করে দেয়। এই পৃথিবীতে কোন বৃদ্ধাশ্রম থাকা উচিৎ নয়। রাষ্ট্রের উচিৎ সেই সব সন্তানকে শাস্তি দেয়া যারা বৃদ্ধ পিতামাতাকে অবহেলা করে।
আফগানিস্তানে তালেবানদের নেতা মোল্লা মোহাম্মাদ ওমরের শাসনামলের একটা অভিনব শাস্তির খবর বিশ্ব মিডিয়াতে এসেছিল। বৃদ্ধ মা কে আঘাত করেছিল এমন এক লোকের গলায় পানি ভর্তি কলস বেঁধে দেয়া হয়েছিল, ১০ মাসের জন্য। লোকটা সেই কলস গলায় নিয়েই তার দৈনন্দিন সব কাজ করতো, তার পেছনে সর্বক্ষণ নিয়োজিত থাকতো একজন রক্ষী।
কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে ‘তোমার মা কি তোমার সাথে থাকে?’ এই প্রশ্নে আমি বিব্রত হই, আতঙ্কিত হই। আমি উত্তর দেই – না, আমি আমার মায়ের সাথে থাকি ।