বহুদিন পর একটা দারুণ পুরোনো সন্ধ্যা
এই পুরোনো সন্ধ্যায়
নিজেকে খুঁজে পেলাম
রাজবাড়ির সিংহদ্বারের সামনে
রাজ অমাত্যবর্গের আগমন বার্তা রটে যায়
নহবত খানায়
কিংখাবধারী দুই কাফ্রি নিগ্রো যখন সবল বাহুতে
টেনে ধরে ফটকের দুই পাল্লা
আমি তখন চট করে এক নজর দেখে নেই
ভেতরের চোখ ধাঁধানো জৌলুস
সেভাবেই সারা জীবন একই দৃশ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেল
আমার রাজবাড়ি দর্শন;
বাবা বলতেন, ‘রাজকন্যে হচ্ছে রাজ্যের লক্ষ্মী।’
আমি সেই লক্ষ্মীকে দেখার জন্য সিংহদ্বারের অদূরে
অবলীলায় ঘুর ঘুর করে কাটিয়ে দিয়েছি
এক লক্ষ দিন আর এক লক্ষ রাত।
আমি বড় অল্পে সন্তুষ্ট
কখনো চাইনি পয়মন্ত লক্ষ্মী রাজকন্যে পূর্ণ চোখ মেলে
আমাকে দেখুক
আমার সর্বাঙ্গে ছুড়ে দিক তার পদধূলি,
এসব আমি কখনই চাইনি
শুধু ওই সুউচ্চ রাজপ্রাসাদের ঝুল বারান্দায়
কদাচিৎ তার দেখা পেলে আমি ক্ষমাশীল হয়ে যেতাম।
আমি ভুলে যেতাম
আমার পূর্বপুরুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা
খাজনার দায়ে কেড়ে নেওয়া আমার কৃষক পিতার
এক টুকরো জমির কথা
ভুলে যেতাম আমার মায়ের শেষ সম্বল
দুগাছি চুড়ির মূল্য
উল্টো করে ঝুলানো আমার ভাইয়ের
নাক দিয়ে ঝরা ফোঁটা ফোঁটা রক্তের শব্দ
ওই রঙমহল থেকে ভেসে আসা আমার
যুবতী বোনের চিৎকার
আমি নির্দ্বিধায় ভুলে যেতাম
নিশুতি রাতে শূন্য ভিটা থেকে ভেসে আসা
আমাদের পোষা কুকুরটার ক্রমাগত কান্না,
আমি সব ভুলে যেতাম, সব।
সবাই আমাকে কাপুরুষ বলে বলুক
লক্ষ্মী রাজকন্যে,
পুরোনো সন্ধ্যার মতো
আমার জীবন থেকে তুমি কখনো
হারিয়ে যেওনা।