পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১১
আসমান লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। লেখক এখানে যে ভাব ও ভাষায় ধর্মতত্ত্ব, প্রেম, রাজনীতি, ভূগোল সর্বোপরি একটা মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সকল দিক গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তা বাংলা সাহিত্য বিরল। আসমান এমন একটা উপন্যাস যে উপন্যাস পড়ে আপাতদৃষ্টিতে নিজের সম্পর্কে, নিজের ধর্ম, সৃষ্টি কর্তা, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করা সহজ হবে। এই উপন্যাসে যতগুলো বিষয় এসেছে তা অল্প কথায় লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাবো সবাইকে আসমান উপন্যাসটি পড়ার জন্য এবং এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে আপনার সময় বৃথা যাবে না।
আর প্রার্থনা করব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আল্লাহ আমাদের লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাই কে দীর্ঘজীবী করুন।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১২
লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা “আসমান” উপন্যাসটিতে ধর্মীয় গোঁড়ামি উপেক্ষা করে দ্বীনের ব্যাখ্যা খুবই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা শিক্ষিত সমাজের কাছে দারুণভাবে গ্রহণীয়। এটি পড়ে আমার মেয়ে দ্বীনি ব্যাখ্যা গুলো যুক্তি সহকারে বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এখন উপন্যাসের “ওমর” এর মতো Educated “ইমাম সাহেব ” চরিত্রটি আমার মেয়েরও favourite.
Thank you so much Latiful Islam Shibli তোমার পাঠকদের এতো সুন্দর একটা উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৩
অনেক দিন পর এমন একটা বই পড়লাম৷ অনুভূতিগুলো কেমন জমাট বেঁধে আছে৷ পর্যালোচনা করার মতো মানসিকতা এখন নেই৷ ঘোর কাটাতে সময় লাগবে৷
শুধু বলবো একটু পড়ে দেখুন৷
আপনার চিন্তার বাঁক ঘুরে যাবে!
ভাবনার রেখায় ভাঁজ পড়বে!
বুকটা কেঁদে উঠবে ওমারের মায়ের জন্য!
রুশোর পরিবর্তনে হাসির রেখা পড়বে মুখে!
ইচ্ছে হবে সেই বৃদ্ধ ইমামের একটুকু সন্নিধান!
মর্টারের সেলে একবাড়ি আনন্দের নাই হয়ে যাওয়া, লাশের ছিন্ন-ভিন্ন অঙ্গ, কচি কচি নিথর হাত-পাগুলো, মানুষের বাঁচবার আকুতি আপনার বুকে এক সাগর হাহাকারের জন্মে দেবে৷
আপনার চোখে-মুখে জেগে উঠবে মানবতার জন্য কষ্ট, গুয়ান্তানাম বের কাহিনী পড়ে৷সব শেষে আপনার ইচ্ছে করবে, হায় ওমার যদি আসমানের দেখা পেত৷ আহা! আসমানের বুকে আর কি ডানা মেলবে না ওমার নাম্মী পাখি?
আসমান—নেশার জীবন থেকে জানবাজ যোদ্ধা হয়ে উঠবার এক শিহরিত উপাখ্যান৷
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৪
“আসমান’ উপন্যাসটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।তবে দখল ও দারবিশের চেয়ে বশী।”
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৫
জেল থেকে বলছি
তুমি আমার প্রথম সকাল
আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি
কেউ সুখি নয়
হাসতে দেখো গাইতে দেখো
পলাশীর প্রান্তর
প্রিয় আকাশী, ইত্যাদি।এসব গান শুনতে শুনতে আমাদের কৈশোর কেটেছে। কিন্তু ধাক্কাটা খেলাম এবার বইমেলাতে গিয়ে। শুনতে পেলাম এইসব গান যিনি লিখেছেন তিনিই নাকি একটা ইসলামিক বই লিখেছেন। উনার হাত থেকেই বইটা নিলাম। বাসায় এসে পড়া শুরু করেদিলাম এই ভেবে গানের জগতের একজন মানুষ ইসলাম নিয়ে কি লিখেছে তা দেখার জন্য ! পড়ার পর অভিভূত না হয়ে পারলাম না। ইসলামের অনেক গভীর বিষয় লেখক অতি সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। ইন্টেলেক্চুয়াল এমন অনেক বিষয় আছে যা সচরাচর অনেক নামধারী আলেমদের কাছে শুনতে পাওয়া যায়না। সত্যবাদিতা এমন এক চারিত্রিক গুন যা ছাড়া সঠিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাঁর কথা এমন সত্যবাদীদের দ্বারাই প্রকাশ করে থাকেন। মাশাআল্লাহ।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৬
March, 2018 ময়ময়নসিংহ বই মেলায় ছোট একটা চমকপ্রদ ঘটনা দিয়ে sir এর লেখনীর সাথে পরিচয়।পড়ার শুরুটা “দখল” দিয়ে এরপর “দারবিশ” এখন “আসমান”।তিনটিই ভিন্ন ভিন্ন প্লট, ঘটনা, সময়কাল দিয়ে সাজানো।তবে আসমান সর্ম্পূন ভিন্নর্ধমী ঘটনার সংমিশ্রণ।আসমান আমার এমন এক অনুভূতি নাম যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।ঠিক অব্যাক্ত গল্প কথার মত।এখানে এত এত দিক তুলে ধরা হয়েছে তা এত অল্পতে লেখা শেষ হবেনা।যেখানে র্বণনার বিন্যাসে কখনও উঠে এসেছে র্ধমের চমৎকার ব্যাখা কখনও আসমান আর ওমারের অসামান্য ভালোবাসা কখনও বা সৃষ্টির্কতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস।যেটা মানুষের ভিতর র্পযন্ত নাড়া দিতে সক্ষম।
প্রথমাংশে ওমারের বিচ্ছেদের যন্ত্রনা ভুলতে নেশা করা সেখানে ইমামের র্ধম নিয়ে চমৎকার সব ব্যাখা যা তাকে নতুন পৃথিবীর সন্ধান দিতে সক্ষম হয়।একই সাথে উঠে এসেছে র্ধম, জিহাদ, বিচ্ছেদ, ভালোবাসা, রাজনীতি, ইতিহাস, আফগানের গৃহযুদ্ধ, ন্যায়, বিবেক বোধ, এছাড়াও আরো অন্যান্য দিক।কল্পনা আর ইতিহাস এমন এক সুতোয় বাধা পরেছে যেখানে দুটোকে আলাদা করা প্রায় অসম্ভব।মনে হয় প্রত্যেকটি ঘটনার সাক্ষী আমি, সবকিছু চোখের সামনে হচ্ছে।যা একরকম অদ্ভুত অনুভূতির মিশ্রণ ।
“আসমান শুধু একটি উপন্যাস নয় প্রেম, বিরহ, ইতিহস, জিহাদ, যুদ্ধ নিয়ে তৈরি অসামান্য উপখ্যান|”
“আসমান” এর প্রতিটি শব্দ আমায় অভিভূত করে। মন্ত্রমুগ্ধের মত টানে।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৭
যখন আমি ঘরে থাকি
বুকে তুলে রাখি
যখন আমি বাইরে থাকি
মাথায় তুলে রাখি,
এছাড়া আর রাখবো কোথায়?
হয় না সংকুলান
আমি তোমার একলা পাখি
তুমি আসমান।গত দুটো মেলায় কেন যেন অ্যাণ্টিসিপেশন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি। এর আগে কোন বিশেষ বইয়ের জন্য খুব একটা আগ্রহ করে অপেক্ষায় থাকতাম না। এখন দেখছি-মেলায় বের হওয়া বইয়ের জন্য অপেক্ষা বাড়ছে, বাড়ছে আগ্রহ।
এই বছরে তো একেবারে পাঁচ-ছয়টা বইয়ের জন্য ছিল অপেক্ষা। তাদের মধ্যে একটা লতিফুল ইসলাম শিবলী ভাইয়ের আসমান।
প্রথমেই কিছু কথা বলে নেই-গত বছরের “দখল” বইটি সব দিক দিয়েই ছিল আশাহত করার মতো। লেখা, ছাপা, বানান-কোন কিছুই মন ভরেনি। আসলে মন ভরেনি বললে নিজের প্রতি অবিশ্বস্ততা করা হবে। বাজে লেগেছে।
আসমান নিয়ে তারপরেও ছিল আগ্রহ। প্রবল আগ্রহই বলা চলে, কেননা পচা শামুকে পা বারবার কাটে না। তাই লেখক যে পূর্ণদ্যমে ফিরে আসবেন, তাতেও সন্দেহ ছিল না।
গল্পের প্লটটাই যে অন্যরকম। স্বীকার করেন আর না-ই করেন, দাড়ি-টুপিঅলা মোল্লা সমাজকে আমরা কখনও মূলধারার অংশ হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। একজন মানুষ দ্বীনের বড় বুঝ পেয়ে সুন্নতি লেবাস ধরে-এটাই আমাদের ধারণা। কিন্তু মানুষ যে সুন্নতি লেবাসের মধ্যে খুঁজে পেতে চায় দ্বীনকে, সেটা কতজন বিশ্বাস করতে চাই?
গল্পটার মূল চরিত্র ওমার। সে আপনিও হতে পারেন, আমিও হতে পারি। সম্ভবত আমাদের চারপাশে আর দশজন যুবকের মতোই তার শুরু। আচ্ছা, প্রতিটা সার্কেলে কি এমন এক বন্ধু থাকে না, প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে যে পা বাড়ায় অন্য কোন দিনে? যার হয়ে যায় আমূল পরিবর্তন? ওমারেরও হয়েছিল। ও পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল ড্রাগস, মিউজিক ইত্যাদিকে। এমন ক্ষেত্রে সবার কোন-না-কোন বন্ধু থাকে যে হয়ে যায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী। রুশোও তেমন।
এমন সময় ঘুরে যায় ওমারের জীবনের মোড়। দেখা হয় তার এক ইমামের সঙ্গে। শেষ কবে এমন “মূলধারা”-এর লেখকের বইতে এমন কোন ইমামে পেয়েছি, তা জানি না। কেমন ইমাম? যিনি সব কথা বলেন যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে, যার সব কথার মাঝে আছে চিন্তার খোরাক। সাধারণত উপন্যাসে ইমামরা হন পান খাওয়া, দাড়ি হাতানো, মেয়েদেরকে পড়াতে নিষেধ করা কোন গোঁড়া মৌলবাদী। সেখান থেকে অনেকটা সরে এসে প্রাজ্ঞ এক ইমামের চিত্র অঙ্কনের জন্য ভাইয়া ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
প্রথম পঞ্চাশ পাতায় দর্শনের যে পাঠ লেখক পড়িয়েছেন, সেটার জন্য জীবন সম্পর্কে থাকতে হয় পরিষ্কার একটা ধারণা। হ্যাঁ, সেই ধারণা ভুল হতে পারে। কিন্তু ধারণা একটা থাকতে হবেই।
ইসলামের বেশ কয়েকটা ব্যাপার সুন্দর করে টাচ করে গিয়েছেন। আমার ভাবতে এবং বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, মুসলমানরা এভাবেই ভাবে। এই চিন্তাতে উদ্বুদ্ধ হয়েই তারা পরিচালনা করে তাদের জীবন (যদিও সেটা আজকালের নানা ঘটনায় বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে)।
তাবলিগের প্রসঙ্গ এসেছে বইটিতে বেশ বিস্তৃত ভাবেই, ব্যক্তিগতভাবে তাবলিগের সঙ্গে এক সময় সম্পৃক্ত থাকায় ব্যাপারটা ভালোই লেগেছে। যদিও তাবলিগের আছে অনেক লেয়ার, সেটাও কেবল বইয়ে উল্লিখিত কার্যক্রমের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়; তারপরও যতটুকু এসেছে, তাতে অন্তত আমার চোখে কোন বিকৃতি ধরা পড়েনি।
পরবর্তী পাতাগুলোতে আমরা দেখতে পাই নতুন এক ওমারকে। এমন ওমারকে সম্ভবত আমাদের চারপাশে পাওয়া যাবে না। চরিত্রের এই পরিবর্তনটুকু যদি ঘটে যেত এক লহমায়, বইটিকে গিলতে কষ্টই হতো। কিন্তু এমনভাবে লেখক এই ওমারকে পাল্টেছেন যে বলতে ইচ্ছে করে, ওমার এমন না হলেই বরং অবাক হতাম।
মাঝের কিছু অংশ অদ্ভুত সুন্দর। বিশেষ করে বইয়ের নামকরণের স্বার্থকতা যে অংশে, সেই অংশকে আমার ব্যক্তিগতভাবে একবার হলেও স্যালুট দিতে ইচ্ছে হয়েছে।
শেষের অংশটুকু বিষাদমাখা, সমাপ্তি সুন্দর। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি বইয়ের সুন্দর একটা পরিসমাপ্তি।
নালন্দা সম্ভবত অভিজাত সমাজের প্রকাশনী হিসেবেই খ্যাতি পাবে। বইমেলার প্যাভিলিয়ন সাজিয়ে পাঠককে সেবার দেয়া একটি প্রকাশনী ফেলনা না কোনভাবেই। কিন্তু পাঠকের জন্য প্রকাশনী, প্রকাশনীর জন্য পাঠক নয়। কণ্টেণ্ট যতই ভাল হোক না কেন, তার বাজে উপস্থাপনা পুরো জিনিসটিকেই নষ্ট করে ফেলে। ৮০ গ্রাম কাগজে জঞ্জালের চাইতে, ৬৫ গ্রাম কাগজে উৎকৃষ্ট লেখা আমার কাছে ভালো।
বই বলতে আমি বুঝি কণ্টেণ্ট। প্রচ্ছদে আমার কিছু যায় আসে না, বাঁধাই-ছাপাতেও না। কণ্টেণ্ট ইজ কিং। সেই কণ্টেণ্টের ভেতরে পড়ে লেখা, বানান, মেকআপ। লেখার ক্ষেত্রে বইটি পাঁচে চার পেলেও, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বাকি পয়েণ্টগুলোয় সম্মানজনক মার্ক পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি টাইপ করাতে হয়, সেটা যায় প্রুফ রিডিং-এ। এগুলোর কোন ধাপে ভুল হয়েছে জানি না, কিন্তু এমন বাজে সম্পাদনা বা প্রুফ রিডিং বইটির প্রাপ্য ছিল না।
আশা করি প্রথম তিন মুদ্রণে এসবের দিকে লক্ষ্য না রাখা হলেও, পরেরগুলোতে রাখা হবে।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৮
জীবনে অনেক উপন্যাস পড়েছি কিন্তু আসমানের মত মন ছুঁয়ে যায় নি।” আসমান পড়ে পাঠকের প্রতিক্রিয়া
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১৯
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে কল্পনা ও বাস্তবের যে দূরত্ব আমাদের সমাজে ধার্মিক ও শৃঙ্খলহীন খেয়ালি মানুষের বৈপরিত্য ঠিক ততটাই। বৈদিক বাস্তবতায় সমাজের যে চতুরাশ্রম সেটা ভেঙ্গে বাংলাদেশে এখনও উচ্চশ্রেণি, মধ্যবিত্ত আর নিম্নশ্রেণির সাংস্কৃতিক সংঘাত প্রবল। Latiful Islam Shibli ভাই জিম মরিসন আর লালনকে নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে ইসহাক হুজুরের কথকতায় রুশো আর ওমরকে ব্যবহার করেছেন বর্ণনার কুশীলব হিসেবে। তার একরকম নস্টালজিয়া কাজ করে বাড়ির মুল গেটের পাশেই একটা বিশাল কড়ই গাছ নিয়ে লেখা বর্ণনাগুলোতে। যখন কড়ই ফুল ফোটে, একটা হালকা মিষ্টি গন্ধে তাদের সারা বাড়িটা মৌ মৌ করে। সন্ধ্যার আগ দিয়ে মনে হয় সারা শহরের চড়–ই পাখি গুলো চলে আসে এখানে রাতে ঘুমানোর জন্য। শেষ রাত থেকে গাছের দখল নেয় দোয়েল পাখিরা।
যাপিত জীবনের বাস্তবতায় অভাব-উচ্চাভিলাস আর বিলাসী জীবনের যে বৈপরিত্য সেটাও সুকৌশলে এখানে লিপিবদ্ধ। বড়লোক বাপের বখাটে ছেলে রুশো তার বাপের ক্যাশবাকসো ভেঙ্গে টাকা লুঠ করে গাঁজা ফুকে বেড়াচ্ছে, কাশির সিরাপ ঢক ঢক করে গিলে 6-7 চামচ চিনি নিয়ে চা গিলে নেশা আরও গাঢ় করার জন্য রিকশা ভ্রমণে বের হচ্ছে। তারপর সে যে জিম মরিসনের স্বর্পনৃত্য করছে সেটাও আসমান উপন্যাসকে দিয়েছে ভিন্নরকম এক দ্যেতনা। আর্থিক অবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামাজিক পরিবর্তন বোঝার জন্য কলাবাগানের বাড়িগুলো রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এ উপন্যাসে। তারপর কাহিনী এগিয়েছে বিশ্বাস অবিশ্বাস আর অন্ধবিশ্বাসের সংঘাত নিয়ে।
প্রকৃতি এবং পরিবেশও মাঝে পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য কাজে লাগতে পারে। যেমন, সোজা লেকের পশ্চিম প্রান্তের বটগাছটা এখন শৈশব কৈশর পেরিয়ে তারুণ্যে পড়েছে। বটগাছ গুলো বহু বছর বাঁচে। কোন কোনটি দুই তিন শতাব্দী। মানুষের প্রাচীন ছাতা। একই বৃক্ষের ছায়ার নিচে বেড়ে ওঠে তিন চার প্রজন্মের মানুষ। যে শিশু এই বটবৃক্ষের ছায়ার নিচে খেলতে খেলতে বড় হয়, সেই একদিন আরেক শিশুর জন্ম দিয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধ হয়, তারপর একদিন মরে যায়। বৃক্ষদের ভেতর বটবৃক্ষ সবচেয়ে দুঃখি বৃক্ষ। এই বৃক্ষের জীবন মানুষের মত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ডালপালার ভেতর থেকে নেমে আসে ঝুরি, ধীরে ধীরে পরিণত হতে থাকে আর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে এর প্রথম মূলটি। দীর্ঘ জীবন মানেই শোকের দীর্ঘ সফর।
তারপর একাকীত্ব—-
গম্ভীর গলায় রুশো বলে
‘লোনলিনেসটা এনজয় করতে পারিস না?’
কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে ওমার বলে ‘হ্যাঁ পারি, তুই যদি পাছার কাপড় খুলে একটা গরম রুটি বানানোর তাওয়ার উপরে দশ সেকেন্ড বসে থাকতে পারিস তা হলে আমিও লোনলিনেস এনজয় করতে পারবো। এ থেকে বুঝে নেয়া যায় লেখকের দৃষ্টিতে একাকীত্ব কতটা ভয়ানক। এই সে একাকীত্বের বর্ণনা যার জন্য মার্কেস লিখেছিলেন কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়া কিভাবে সেই দূর বিকেলে তার বাবাকে নিয়ে বরফ আবিষ্কার করতে গিয়েছিল। আর কোয়েলহো তো বলেই দিয়েছেন নিঃসঙ্গতা ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে ভয়াবহ।শিবলী ভাইয়ের উপন্যাসে আসমানে ওমর নিঃসঙ্গতার যন্ত্রনা বোঝাতে তার বন্ধু রুশোকে যেভাবে তার লুঙ্গি খুলে রুটি ভাজার গরম তাওয়ায় বসাতে চেয়েছে। আমি ঠিক তেমনিভাবে পড়লাম পাওলো কোয়েলহোর লেখায়। –We all want commitment, we all want someone to be beside us to enjoy the beauties.Better to go hungry than to be alone. জীবনধর্মীতা প্রশ্নে এ উপন্যাসের যতগুলো লাইন পিড়েছি ভাল লেগেছে। অন্তত খেয়াল করে দেখা যাচ্ছে প্রেক্ষিত যাই হোক শোক, দুঃখ, যন্ত্রণা, আবেগ-উৎফুল্লতা কিংবা উচ্ছাসের ভাষা এক ও অভিন্ন।
পাঠক প্রতিক্রিয়া – ২০
কাহিনি বিশেষরূপে স্থাপন করা হয় বলেই তা উপন্যাস আর সেই উপন্যাস যদি হয় ঐতিহাসিক!
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রাজসিংহ উপন্যাসের বিজ্ঞাপনে বলেছেন, “ইতিহাসের উদ্দেশ্য কখনও কখনও উপন্যাস সুসিদ্ধ হইতে পারে। উপন্যাসের লেখক সর্বত্র সত্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ নহেন। ইচ্ছেমতো অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য কল্পনার আশ্রয় লইতে পারেন।” সেই কল্পনার আশ্রয়ে লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী
‘আসমান’ ঐতিহাসিক উপন্যাসে পাঠকের মনকে যুক্ত করেছেন আফগানিস্তানের তালিবানি আর নর্দান অ্যালায়েন্সের মধ্যের যুদ্ধের দাবানল, কাবুলের রক্তাক্ত ইতিহাস। পাঠক শ্রোতের টানের ন্যায় যুক্ত হয়েছে সেখানকার জীবন ও জগতের সঙ্গে।উপন্যাসটিতে আছে চরম বাস্তবকে অতিক্রম করে যাবার আকুতি। ১৯৯৬-২০১২পর্যন্ত আফগান সময়কাল লেখক সুচতুরতায় বর্ণনা করেছেন। উপন্যাসিকের কাব্যদৃষ্টির কারণে ‘আসমান’এ জীবন দর্শন, আত্মদর্শন, ধর্মদর্শন সব স্নিগ্ধ ও মধুর করে তুলেছে। পাঠক মন প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে – প্রত্যেক ইমামগণ ‘আসমান’ উপন্যাসের ইমাম সাহেবের মতোন যদি হতেন! দারুণ তথ্যবহুল উপন্যাসটি পাঠে অনুধাবন করা যায় লেখক উপন্যাসটি লেখার পূর্বে ইতিহাস, স্থান -কাল, তথ্য নিবিড়ভাবে পাঠ করে নিয়েছেন। তবে বইটিতে কোনো রেফারেন্স গ্রন্থতালিকা উল্লেখ করা নেই থাকলে উপন্যাসটি আরও সমৃদ্ধ হতো।
” মানুষ চায় সবাই না হোক অন্তত ‘কেউ একজন’ তাকে বুঝুক। হাজারও সম্পর্কের ভেতর দিয়ে মানুষ আসলে সেই কেউ একজনকেই খুঁজে বেড়ায়।” এই বইটিতে এই রকম আবেগের যায়গাগুলো হৃদয়ছোঁয়া।
সাহিত্যের যায়গাটুকু পুরোটাই সাহিত্য কোনোরকম বাড়াবাড়ি নেই।আত্মশুদ্ধি আর আধ্যাতিকতা উপন্যাসটির প্রধানউপজিব্য যা অন্য সামাজিক বা কাব্যিক উপন্যাস থেকে এটিকে আলাদা করেছে। উপন্যাসটিতে তাবলিগি ইজতেমার ইতিহাস অংশটুকু কেমন নিরস টানহীন। বাদবাকি ইতিহাস দুর্দান্ত…..
জুলুমকারীর বিরুদ্ধে জেহাদ ফরজ। তাই বলে তালিবানি, আল-কায়েদা, নর্দান অ্যালায়েন্সই হয়ে যাবো কি যাবো না তা এই বই থেকে উৎসাহিত হয়ে নয়। কারণ লেখকের লেখায় এটা সুস্পষ্ট যে, মানুষ যতই আত্মাশুদ্ধি হোক, খোদাপ্রেমী হোক, এই মানব জীবনে বেঁচে থাকতে হলে আনন্দ দরকার, প্রিয়জন দরকার- সেই আনন্দ না থাকলে, প্রিয়জন না চিনলে সে হবে মজনুন…..